বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষেরা সমাজের বোঝা নয়, উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে তারাও সমাজের জন্য কিছু করবে। এমন পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৫ সালে মাত্র ২০ জন প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে খুলনার কয়রা শেখ রাসেল প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পরম স্নেহ ও মমতা দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
খুলনা জেলা শহর থেকে শত কিমি. দূরে সুন্দরবন উপকূলঘেঁষা জনপদ কয়রা উপজেলায় এমন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আশার আলো দেখছে এলাকার প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশু এবং তাদের অভিভাবকরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের আলোর মুখ দেখাতে ও সমাজ উন্নয়নে তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এস. এম বাহারুল ইসলাম কয়রা সদরে থানার সামনে তিন একর জায়গা নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন।
বিদ্যালয়টির যাত্রাকালে শিক্ষার্থী ছিল ২০ জন। বর্তমানে শিক্ষার্থী ৩০৯ জন। শিক্ষক আছে ১৮ জন। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য ১০টি ভ্যানগাড়ি রয়েছে। বিদ্যালয়টি এখনও এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষক ও কর্মচারীরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের পরিচালনার ব্যয় বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সংস্থা (বিমাস) বহন করছে।
সরোজমিনে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা অনেক কষ্টের, তবুও আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদের বিকাশ ঘটাতে। দিন দিন তাদের উন্নতি হচ্ছে। যারা কারো সঙ্গে মিশতো না তাদের অনেকে এখন মানুষের সঙ্গে মেশে। কথাও বলার চেষ্টা করে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা জীবনপট পাল্টে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইউনুস আলী বাবু বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান করাতে পেরে ভালো লাগে। সারা জীবন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সেবা ও পাঠদান করতে চাই। তিনি আরও বলেন, এখানে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুরা লেখা পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্র মো. মিরাজ হোসেন ও ২য় শ্রেণির সাদিয়া সুলতানা বলেন, শিক্ষকরা আমাদের যত্ন সহকারে ক্লাস করান। আমরা সরকারের সকল সুবিধা পেতে চাই, আমাদের এ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি খুব দ্রুত বিল্ডিং হলে আমরা খুব খুশি হবো।
বিশেষ সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মা গোবরা গ্রামের বাসিন্দা মিনারা খাতুন বলেন, আমার সন্তান আগে বাড়িতে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকত। এ স্কুলটি হওয়াতে অনেক সুবিধা হয়েছে। অন্যসব শিশুদের সঙ্গে সে স্কুলে আসছে, ছবি আঁকছে, খেলাধুলা করছে। এখন সে অনেক স্বাভাবিক। এসব শিশুদের মানসিকভাবে গড়ে তুলতে এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম বাহারুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল আপার অটিস্টিক শিশুদের জন্য কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বিদ্যালয়টি গড়ে তুলি। কয়রাতে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার আলোয় নিয়ে আসতে পেরে ভালো লাগে।