- নিখোঁজের ৯ দিনেও সন্ধান মেলেনি
- থামছেনা পরিবারের আহাজারি
ভোলার চরফ্যাসনে নিখোঁজ ৮ জেলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিখোঁজের ৯দিন পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান মিলছেনা। স্বজনদের অন্তহীন আহাজারীতে চরমানিকা গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। নিখোঁজ জেলেদের জীবন নিয়ে দোলাচলে থাকা স্বজনদের শান্তনা দেয়ার কোনো ভাষাই যথেষ্ট নয়। অনবরত কান্নায় স্বজনদের চোখের জল শুকিয়ে গেছে। কেউ গেলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কখনো কখনো নিঃশব্দ কান্না বুকফাঁটা আর্তনাদ হয়ে বাতাস ভারী করে তোলে। গতকাল বুধবার চরমানিকা ইউনিয়নে নিখোঁজ জেলেদের বাড়িতে গেলে এমন দৃশ্য চোখে পরে।
গত মঙ্গলবার ভোর রাতে ঢালচরের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ঢালচর ঘাটের ইউসুফ মাঝির ওই মাছধরা ট্রলারটি ডুবে যায়। সকালে মহিপুরের একটি মাছধরা ট্রলার দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারের ৫ জেলেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করলেও অপর ৮ জেলের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা এখনো নিশ্চিত নয়। নিখোঁজ ৮ জেলের মধ্যে দক্ষিণ আইচা থানার চর মানিকা ইউনিয়নের নজরুল, রহমান, ইসমাইল, মান্নান ও হারুন, ঢালচর ইউনিয়নের রাসেল ও তছলিম, জাহানপুর ইউনিয়নের জুয়েলের পরিচয় জানা গেছে। উদ্ধার হওয়া জেলেদের মধ্যে প্রধান মাঝি ইউসুব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল বুধবার দুপুরে নিখোঁজ জেলে ইসমাইলের চর মানিকা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন সন্তানসহ স্ত্রী রুমা বেগম স্বামীর জন্য আহাজারী করছেন। নিজস্ব কোনো জমা জামি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ঢালে ঘর করে বসবাস করছেন তারা। পেশায় মৎস্যজীবী স্বামী ইসমাইল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন। স্থানীয় ব্যক্তি এবং অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ২ লাখ টাকার ঋণ আছে। মাছধরে অর্জিত আয় থেকে ঋণের কিস্তি দেবেন এমন আশা নিয়েই হতদরিদ্র ইসমাইল সাগরে ভেসেছিলেন। ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে আমেনা, দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া সুমন আর ৪ বছরের শিশু নোমানের ভরপোষ আর ২ লাখ টাকার ঋণের দায় মাথায় নিয়ে নিখোঁজ স্বামীর জন্য বিলাপ করছেন স্ত্রী রুমা বেগম।
চর মানিকা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধের ঢালে আবদুল মান্নানের বসতঘর। নিজস্ব কোনো জমাজমি নেই। দুই সন্তান কাউছার (৭) আর ইকরাম(৫) কে নিয়ে ৭ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী তানিয়া বেগম জীবনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। স্ত্রীর প্রসবকালিন বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি করোনাকাল আর মাছধরার নিষেধাজ্ঞাকালে বেশ কিছু টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এসব টাকার যোগান দিতেই জীবন বাজি রেখে সাগরে গেছেন আবদুল মান্নান। জালে মাছ না পড়ায় গত মঙ্গলবার সকালে ঘাটে ফিরে আসেন। বাড়ি ফিরে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে দেখা করে বিকেলেই আবার সাগরের উদ্দেশ্যে চলে যান। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ভোর রাতে দুর্ঘটনায় অপর ৮ সঙ্গীর জেলের সঙ্গে নিখোঁজ হন তিনি। ইসমাইল আর আবদুল মান্নানের মতো নিখোঁজ জেলেদের সবাই হতদরিদ্র এবং ঋণগ্রস্ত। এখন শুধুই কান্না আহাজারী আর আগামী দিনের অনিশ্চয়তার কালোছায়ায় ঘিরে আছে নিখোঁজ এসব জেলেদের পরিবারগুলোতে।
প্রাণে বেঁচে ফেরা ট্রলারের প্রধান মাঝি ইউসুফ জানান, শেষরাতে জালপেতে অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ ঝড়ে সাগর উত্তাল হয়ে উঠে। বিপদ আঁচ করতে পেরে জালকেটে দিয়ে ইঞ্চিন চালিয়ে ঝড়ের গতিবুঝে চলতে শুরু করে। কিন্ত মুহূর্তের মধ্যে ঝড়ের তোপে ট্রলারটি উল্টে ডুবে যায়। পরদিন সকালে অপর একটি ট্রলারে উদ্ধার হয়ে ঘরে ফেরা ৫ জেলে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারের ছৈয়ের উপর ছিল এবং ট্রলার উল্টে গেলে তারা ৫ জন সাগরে ভেসে যায়। ওই সময় নিখোঁজ ৮ জেলের সকলে ট্রলারের ছাউনি(কেবিন) মধ্যে ছিল। ট্রলারটি ডুবে গেলে কে কোথায় গেছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না।
কোস্টগার্ড কন্টেজেন্ট কমান্ডার অলিউল্লাহ জানান, আবহাওয়া বৈরির কারণে উদ্ধার অভিযানে বেগ পেতে হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ জেলেদের সন্ধানে আমাদের টহল অব্যহত রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল নোমান জানান, নিখোঁজ জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ হলে সহায়তয়া দেয়া হবে।