ঝড় – বৃষ্টি, রোদ- শীতকে উপেক্ষা করে সংসার পরিচালনা করার তাগিদে পত্নীতলার এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে ‘আজকের তাজা খবর’ বলে হাঁক দিয়ে যান জাকির। সাইকেলে করে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকা প্রেমিকদের কাছে পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন পত্রিকা বিক্রেতা জাকারিয়া হোসেন (জাকির ভাই)।
পত্রিকা বিক্রেতা হলেন পত্রিকার প্রাণ। ভালোবাসার টানে পত্রিকা বিক্রি করে কোনো রকম ডাল-ভাত খেয়ে জীবন যাপন করেন বিক্রেতারা। মনে অনেক ধরনের আশা আকাঙ্ক্ষা থাকলেও দৈনিক অল্প অল্প হওয়ায় তাদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন হতে পারে না। আর তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কেউ ভাবার সময়ও রাখে না। এমনকি পত্রিকা অফিস থেকে শুরু করে পত্রিকা এজেন্সিগুলোরও তেমন ভাবার সময় নেই।
রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ভোর হওয়ার আগেই বাস করে দ্রুত পত্রিকার বান্ডিল চলে আসে পত্নীতলার প্রাণ কেন্দ্র নজিপুর। সেখান থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে জাকির হোসেন উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজার, ব্যবসা, সরকারি-বেসরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সারাদিন ঘুরে ঘুরে পত্রিকা বিক্রি করেন।
এ বিষয়ে হকার জাকারিয়া হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে পত্রিকা বিক্রি করে আসছি। একটা সময় ছিলো বিভিন্ন পত্রিকা অফিস থেকে আমাদের জন্য ছাতা, ব্যাগ, ডায়েরি, কলমসহ বিভিন্ন ধরণের উপকরণ উপহার দিতো। এখন আর কিছুই দেয় না। সহায় সম্বল না থাকার জন্য অন্য কোনো পেশার চিন্তায় করা যায় না। আমাদের নিয়ে কেউ ভাবে না। আমরা কোনো ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাই না। সরকার ও পত্রিকা অফিস যদি আমাদের দিকে সু-নজর দিতো তাহলে বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে একটু ভালো খেয়ে-পড়ে জীবনটা পার করতাম।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নওগাঁ জেলার সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক এ কে সাজু জানান, পত্রিকার হকার হচ্ছে পত্রিকার প্রাণ। তারাই মানুষের দরজায়-দরজায় গিয়ে ছাপানো পত্রিকাগুলো পৌঁছে দেন। এটি একটি মহৎ পেশা। এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তা না হলে এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন হকাররা।