ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারাগারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বন্দিরা

কারাগারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বন্দিরা

ফরিদপুর জেলা কারাগারের যাত্রা শুরু আজ থেকে প্রায় দুশ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে (১৮২৫)। ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র মূল সড়কের (মুজিব সড়ক) ঝিলটুলী এলাকাতে ৩৪ একর জায়গা নিয়ে কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কারাগারটির ৯ একর জায়গায় নির্মিত হয়েছে বন্দিদের থাকার ব্যবস্থার স্থাপনা। অন্যদিকে, ২৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে পুকুরসহ কর্মকর্তা কর্মচারীদের আবাসন ভবন।

তবে ঐতিহ্যবাহী সুপ্রাচীন এই জেলা কারাগারে নেই কোনো চিকিৎসক। অসুস্থ বন্দিদের জন্য ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই কারাগারের ভেতরে বন্দি অসুস্থ রোগীদের ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ। প্রাচীন এই কয়েদখানায় বিপুল সংখ্যক বন্দিদের জন্য টিনশেডে ঘরের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে রোগীদের। যদিও তা ব্যবহারের অনুপযোগী।

সূত্রমতে, গত তিনমাসে বিভিন্ন রোগ নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছে এক হাজার ৫০ বন্দি। বর্তমানে দুজন বন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও গত এক মাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে এক বন্দি।

ফরিদপুরের কারাগারের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে থাকা ফার্মাসিস্ট আশরাফুল আলম জানান, কম করে হলেও কারাগারে বন্দিদের জন্য ২ থেকে ৩ জন চিকিৎসক দরকার। এছাড়া অসুস্থ বন্দিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য পৃথক একটি হাসপাতালে দরকার। পাশাপাশি ৩ থেকে ৪ জন সেবিকা ও ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা দরকার বলে মনে করেন এ ফার্মাসিস্ট।

ফরিদপুর কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক আল-মামুন জানান, প্রাচীন এই বন্দিশালায় ধারণ ক্ষমতা রয়েছে বর্তমানে ৪২০ জন। বর্তমানে ৮৯৭ জন পুরুষ ও ১৭ নারী বন্দি অবস্থান করছেন। যদিও প্রতিদিন বন্দি কম-বেশি হয়। এখানে একটি সহকারি সার্জনের পদ রয়েছে তবে সেটা এক যুগের বেশি সময় ধরে শূন্য রয়েছে।

আল-মামুন আরও বলেন, বন্দিদের কেউ অসুস্থ হলে আমরা ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি। এছাড়াও জেলা সিভিল সার্জন অফিস একজন চিকিৎসককে প্রেষণে দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে তিনি মাঝে মধ্যে আছেন। এর বাইরে একজন সিনিয়র ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। তবে যে জনবল রয়েছে তাতে বন্দি রোগী একজনকে বাইরের হাসপাতালে প্রেরণ করলে তার পেছনে তিন জন ফোর্স দিতে হয়। এতে অন্য কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।

জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক আরও জানান, শুধু ফরিদপুর কারাগারে বন্দি নয় পার্শ্ববর্তী অন্য জেলার কারাগার থেকে অসুস্থ বন্দি আসেন এখানে। আমরা তাদের কারাবিধি নিয়মানুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য কারারক্ষীদের প্রহরায় সরকারি হাসপাতালে পাঠানো পাঠাই।

ফরিদপুর কারাগারের বেসরকারি কারা পরিদর্শক কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, কারাগারের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বন্দি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বন্দিদের নানাবিধ সমস্যা হয় এটা সত্য। তবে আমার পরামর্শ হলো কারাগারের বন্দিদের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি চিকিৎসা সেবাসমূহ নিশ্চত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিতে হবে।

ফরিদপুর কারাগারের বন্দিদের চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকার বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে একজন চিকিৎসকে কারাগারের সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত কারাগার পরিদর্শন করা হয়। বন্দিদের সুবিধা-অসুবিধা খোঁজ নেওয়া হয়। বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন