ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঁঠালের বিদায়ে ‘নিশান উৎসব’

কাঁঠালের বিদায়ে ‘নিশান উৎসব’

নিশান উঠিয়ে বিভিন্ন রঙে সাজানো হয় কাঁঠালের ভ্যান। পরে ঢাক-ঢোলের তালে নেচে গেয়ে সেই কাঁঠাল বাজারে বিক্রি করা হয়। এতে ভালো দাম ও পাওয়া যায়

মৌসুমি ফল কাঁঠাল বিক্রির শেষ সময়ে স্থানীয়ভাবে কাঁঠালের বিদায় জানাতে নরসিংদীর শিবপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে কাঁঠালের ‘নিশান উৎসব’। শতবছরেরও অধিক সময় ধরে চলে আসা প্রাচীন এ উৎসব পালন করে আসছে এ অঞ্চলের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় এ উৎসবের আয়োজন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে বাঘাব ইউনিয়নের বিরাজনগর বাজার থেকে বিভিন্ন রঙের নিশান দিয়ে সজ্জিত ভ্যান গাড়িতে করে ওই এলাকার ভালো ভালো কাঁঠাল একত্রিত করে চৈতন্যা বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। এ উৎসবে ঢাক ঢোল বাজিয়ে আনন্দ করে নানা বয়সী মানুষ। এ উৎসবটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আরও শত শত বছর টিকে থাকবে সেই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের বিরাজনগর গ্রাম। প্রতিবছর কাঁঠালের মৌসুমের শেষদিকে গাছে থাকা অবশিষ্ট ভালো ও বড় সাইজের কাঁঠাল এভাবেই হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যায় তারা। কৃষকদের গাছে থাকা কাঁঠালকে বিদায় জানাতে মূলত এ উৎসবের আয়োজন। স্থানীয়ভাবে এ উৎসবকে বলা হয় কাঁঠালের ‘নিশান উৎসব’। শুধু বিরাজনগর নয়, শিবপুরের বাঘাব ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রাম থেকেই এভাবে গাছের শেষ কাঁঠালটি হাটে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য।

স্থানীয়রা জানান, ঠিক কত বছর ধরে এ উৎসব চলে আসছে তার সঠিক হিসেব নেই তাদের কাছে। তবে, শত বছরেরও অধিক সময় ধরে বছরের ভাদ্র মাসে এ উৎসবের আয়োজন করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা। শ্রাবণ মাসের মাসের শেষ দিকে অথবা ভাদ্র মাসের শুরুতে একটা দিনে সকালে গ্রামের কাঁঠাল ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জড়ো হয়ে কাঁঠাল বহনকারী ভ্যান সাজিয়ে বিভিন্ন রঙিন কাগজের নিশান ও জড়ি দিয়ে। পরে ঢাক-ঢোলের তালে নাচতে নাচতে হেঁটে রওয়ানা দেয় হাটের দিকে। পরে সেই কাঁঠাল হাটে নিয়ে বিক্রি করা হয় ব্যাপারীদের কাছে।

স্থানীয় কৃষক খোরশেদ আলম ও আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি আমাদের বাবা দাদারা এ উৎসব করে আসছে। আমরাও সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ উৎসব করি। আগে আমরা নিজেদের মাথায় করে কাঁঠাল নিয়ে উৎসব করতে করতে যোশর বাজারে গিয়ে কাঁঠাল বিক্রি করতাম। এখন সবাই মিলে ভ্যানে করে চৈতন্যা বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এবার কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে তাই আনন্দটাও বেশী। প্রতি বছরই এ সময়টাতে যার যার গাছ থেকে শেষ সময়ের শেষ ভালো কাঁঠাল নিয়ে এসে একটি জায়গায় জমাই। পরে কাঁঠালগুলো একটি ভ্যানে সাজিয়ে রেখে নিশান ও বিভিন্ন রঙের জড়ি দিয়ে গাড়িটিকে সাজানো হয়। পরে ঢাক-ঢোলের তালে সবাই নেচে নেচে সেই কাঁঠাল বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এ কাঠালগুলোর ভালো দাম পাওয়া যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া জানান, এ উৎসবটা মূলত এখানকার স্থানীয় কৃষকরা করে থাকে। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত কাঁঠালের পুরোপুরি সিজন থাকে। তবে, শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে এবং ভাদ্র মাসের শুরুতে কাঁঠালের শেষ সময় থাকে। এ সময়টাতেই যার যার বাগানের ভালো কাঁঠালগুলো নিয়ে এসে এ উৎসবের আয়োজন করে। এ উৎসবটা আমাদের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। আমি প্রতি বছরই এ উৎসবের ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে থাকি।

চৈতন্যা বাজারের কাঁঠালের পাইকার সৈয়দ উদ্দিন মিয়া জানান, প্রতি বছরই এ সময়টাতে গাছের শেষ ও বড় কাঁঠালটি এ উৎসবের মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসে কৃষকরা। আমরা ওই কাঁঠালগুলো একটু বেশী দামে ক্রয় করি। এছাড়া এখানকার কাঁঠাল অন্যান্য জায়গার তুলনায় আকারে বড় ও সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদাও বেশী। আমরা এখান থেকে কাঁঠাল পাইকারি কিনে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করি।

চৈতন্যা বাজার কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, বাগান থেকে প্রত্যাশিত মুনাফা হওয়ার পর এ উৎসব হয়। এ উৎসবটি একটি ভিন্ন ধরণের উৎসব। এ উৎসবে তাদের সঙ্গে আমরাও আনন্দ করি। এছাড়া তাদের কাঁঠাল যেন নির্দ্বিধায় ও নিশ্চিন্তে বেঁচা কেনা করতে পারে সেই ব্যাপারে সকল ধরণের নিরাপত্তা দেয়া হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন