ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় নমনীয় ও বাস্তবমুখী থাকতে হবে

বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় নমনীয় ও বাস্তবমুখী থাকতে হবে

চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও নমনীয় এবং বাস্তবমুখী নীতি নিয়ে এগুনোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

বিএফআইএনের চতুর্থ বর্ষপূর্তী উপলক্ষে কাঠমুণ্ডুতে আয়োজিত ‘নেপাল ইকোনমিক আউটলুক ২০২৩ অ্যান্ড বিয়ন্ড’ শীর্ষক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

নেপালের ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. বিশ্বনাথ পৌডেল প্রধান অতিথি ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখার পর পরের অধিবেশনে ড. আতিউর রহমান একটি মূল নিবন্ধও উপস্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যেমনটি বলেছেন সেভাবে ‘অ্যাডভেঞ্চারাস’ না হয়ে, বড় বড় লাফ না দিয়ে চলমান সংকট মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমানে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করে নিজেদের সংকট মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ধীরে-সুস্থে এগুলোকেই সঠিক পথ বলে তিনি মনে করেন। তিনি চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকালে আর্থিক ও জ্বালানি বাজারের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কি কি উদ্যোগ নিয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

ড. আতিউর বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুদের হার এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় রাখার যে সিদ্ধান্ত নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংক নিয়েছে তাকে স্বাগত জানান। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই হারগুলো বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি এবং এসএমইখাতের উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ দেয়ার জন্যও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. আতিউর স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকও তুলনামূলক ছোট উদ্যোক্তাদের রক্ষা করার জন্য একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিলো।

বর্তমানে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলোর কারণে পুরো অর্থনীতি ও আর্থিক সেবাখাতের ডিজিটাইজেশনের নতুন সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. আতিউর। দক্ষিণ এশিয়ার আর্থিক সেবাখাতের নিয়ন্তাদের প্রতিটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা চালু করতে যাচ্ছে।

ড. আতিউর বলেন, বাকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারে। তবে ডিজিটাইজেশন হলেও একেবারে মাঠ পর্যায়ে আরও অনেক দিন নগদে লেনদেন চলবে। তাঁর মতে পুরো ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশনে আরও সময় দরকার হবে। তাই এক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে এগুনোর দরকার নেই। তবে এখন থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল সংস্কৃতি গড়ে তোলা দরকার এবং এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, ফিনটেক এবং মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলায় মনোযোগ দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। এসব উদ্যোগকে অবশ্যই মানবিক হতে হবে এবং সে জন্য স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির সঙ্গে মানবশক্তির ব্যবহারের একটি যথাযথ মিশ্রণের মাধ্যমে কাজ কার পদ্ধতিই সবচেয়ে উপযুক্ত হবে বলে ড. আতিউর মনে করেন।

সবশেষে বাণিজ্য ঘাটতি এবং কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতিকেই মুদ্রা বিনিময় হারের অস্থিরতার প্রধানতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ড. আতিউর এক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টার আহ্বান জানান। তিনি বলেন- “আমাদের বাজারের ভাষা বুঝতে হবে এবং বাজার যেন আরও বেশি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সুদের হার এবং মুদ্রা বিনিময় হার- এ দুটোর বিষয়েই নমনীয় এবং বাজারমুখী হওয়া এখন সময়ের দাবি।” কিন্তু একই সঙ্গে বাজার যেন শান্ত এবং ভারসাম্যপূর্ণ থাকে তা নিশ্চিত করতে মনিটরিং জোরদার করার ওপরও তিনি জোর দেন। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘উন্মুক্ত আঞ্চলিকতা’র নীতির জায়গা থেকে সকল ধরনের জনতুষ্টিবাদী অর্থনৈতিক নীতি বর্জন করার মাধ্যমে বৈশি^ক অর্থনীতির বিভাজন এড়ানোর জন্য তিনি উদাত্ত আহ্বান জানান।

সংবাদটি শেয়ার করুন