ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্বস্তি বাড়াবে চিনিও

অস্বস্তি বাড়াবে চিনিও

চায়ে চুমুক দিয়ে দিনের শুরুটা করা অনেকেরই অভ্যাস। ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ হাতে পত্রিকার পাতায় চোখ বোলাতে কে না চায়। তবে এবার সেক্ষেত্রেও ভাবতে হতে পারে দুবার। কারণ চায়ের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ চিনির দাম বাড়ছে। চিনি ছাড়া চায়ের স্বাদ নেয়ার প্রয়োজনও পড়তে পারে। তাই সকালে ধোঁয়া উঠা চায়ে চুমুক দেয়া বিস্বাদেও পরিণত হতে পারে।

শুধু কি চা? মিষ্টিজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রেও তো চিনি বাধ্যতামূলক। মিষ্টি প্রেমীদের জন্যও তাই খানিকটা দুঃসংবাদ দিতে যাচ্ছে চিনির দাম। কারণ, ডলার দাম বাড়ার কারণে চিনির দাম আরও বাড়তে পারে। এমন বার্তা দিয়েছে চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। চিনির দাম বাড়ানোর জন্য গত ১০ আগস্ট সংস্থাটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আগে টনপ্রতি চিনি আমদানিতে শুল্ক দিতে হতো ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। এখন ডলারের দাম বাড়ার পর শুল্ক দিতে হচ্ছে টনপ্রতি ২৮ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকা। এতে পরিশোধন শেষে প্রতিমণ চিনির মিলগেট দাম দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ৭০৩ থেকে ৩ হাজার ৮৮৮ টাকা। অথচ চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৯২০ টাকায়। এ পরিস্থিতিতে চিনির দাম বাড়াতে না পারলে লোকসান বেড়ে কারখানাগুলো দেউলিয়ায় পরিণত হবে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে বছরে চাহিদা রয়েছে কমবেশি ১৮ থেকে ২০ লাখ টন অপরিশোধিত চিনির। চাহিদা মেটাতে দেশে প্রতি বছরে ৯৬ শতাংশ চিনি আমদানি করতে হয়। এর বেশিরভাগই আসে ব্রাজিল থেকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো থেকে আসে ৫০ থেকে এক লাখ টনের মতো। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ আরও কম। অবশিষ্ট চিনি আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।

কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ ১০ মাসে ১ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার টন পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। গত সপ্তাহে চিনির কেজি বিক্রি হয়েছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা দরে। মালিবাগ বাজারের এক মুদির দোকানি বলেন, আমরা চিনি কিনি পাইকারি বাজার থেকে। সেখান থেকে ৮০ টাকা দরে চিনি কিনতে হয়। এই দরের সঙ্গে আরো কিছু ঘাটতি থাকে। এরমধ্যে রয়েছে পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ। সবশেষে হিসাব কষলে ৮৫ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭২ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২২ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮৮ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৯ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ লাখ ৭০ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৩ টন অপরিশোধিত চিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বলছে, গত পাঁচ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে (২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১) দেশে এক কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫৬০ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ আমদানি করেছে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এই সময়ে ৪৪ লাখ ২ হাজার ১৯২ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৩৬ শতাংশ অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে মেঘনা গ্রুপ। মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ও ইউনাইটেড সুগার মিলস লিমিটেডের নামে মেঘনা গ্রুপ আমদানি করেছে ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৯ টন অপরিশোধিত চিনি। এছাড়া আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ১২ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৯ টন, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৫ এবং দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেড ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৯ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে।

অন্যদিকে, সরকারি ১৫টি সুগারমিলের উৎপাদন সক্ষমতা বার্ষিক প্রায় দুই লাখ টনের মতো। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা থাকে সোয়া লাখ টন উৎপাদনের। কিন্তু তাও উৎপাদন করতে পারে না সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই অর্থবছর ৮২ হাজার ১৪০ টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে। তবে পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে এ উৎপাদন ২৫ হাজার টনে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮২ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হলেও এরপর সরকার ছয়টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে অন্য ৯টি চিনিকল থেকে ২৫ হাজার টন উৎপাদন এসেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন