সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে আত্মহত্যা। প্রবণতা বাড়ছে আত্মহত্যা চেষ্টার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আত্মহত্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। পাশাপাশি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন ২ জন। গত তিন মাসে বিষপান ও গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন প্রায় ৫২ জন। চলতি মাসসহ গত তিন মাসে থানায় ইউডি মামলা হয়েছে ১৭টি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় গত মে মাসে ৯, জুনে ২৩, জুলাইয়ে ২০ এবং চলতি মাসে ২ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এদের মধ্যে ৩৩ জনই নারী। অপরদিকে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মে মাসে ৫ ও জুনে ২, জুলাই মাসে ৬ এবং চলতি মাসে ৪ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আত্মহত্যার চেষ্টা এবং আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
প্রাপ্ত তথ্যনুসারে, সপ্তাহের ব্যবধানে আত্মহত্যায় প্রাণ হারায় ৪ জন। তার মধ্যে তিনজন পুরুষ ও একজন নারী। গত বৃহস্পতিবার রোগের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। গত ৫ আগস্ট মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ার জন্য একজন অপরজন নেশাগ্রস্ত হওয়ায় আত্মহত্যা করেছে এমন দাবি পরিবারের সদস্যদের। তবে, হঠাৎ আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাবিয়ে তুলেছে উপজেলাবাসীকে।
প্রাপ্ততথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নারী ও পুরুষরা প্রধানত দুভাবে আত্মহত্যা করে থাকেন। আত্মহত্যার একটি ধরণ হচ্ছে, গলায় ফাঁস এবং আরেকটি বিষপানে আত্মহত্যা। তবে হারপিক পান ও ইঁদুর তাড়ানোর গ্যাস ট্যাবলেট সেবনেও আত্মহত্যা করে থাকেন কিছু মানুষ। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অন্যদের বোঝা হওয়ার অনুভূতি গুরুতর অসুস্থতা, তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার ঘটনা আবেগতাড়িত।
বাবা-মায়ের সঙ্গে ঝগড়াসহ ছোটখাটো বিষয়েই আবেগতাড়িত হয়ে অনেকে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। বেশকিছু দিন যাবৎ অনুধাবন করছি, অল্প বয়সের তরুণ-তরুণীদের কোনো শক্ত করে কথা বললেই তারা মনের ভিতর গেঁথে নিচ্ছে এবং তারা সামাজিকতার কোনো মূল্যায়ন করতে চায়। তারা যে আগামীর ভবিষৎ বিষয়টি বুঝতে চাচ্ছে না। একজনের আত্মহনন দেখে অন্যজনের মাঝেও এ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বা পাবে এমনটাই বললেন, শাহজাদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন্স আব্দুল মজিদ।
তিনি আরও বলেন, আমরা থানা পুলিশ সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ সপ্তাহ থেকেই বিট পুলিশিং এবং প্রতিটি স্কুলে গিয়ে বিষটি বুঝানো জন্য চেষ্টা করা হবে এবং তিনি প্রতিটা বাবা-মাকে সন্তানের সঙ্গে কঠোর আচরণ না করে সংশোধনে সময় দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যেই আমার নজরে এসেছে। আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ডেকে এবং চিঠি দিয়ে অবগত করবো যে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে যেন সপ্তাহে অন্তত একদিন আত্মহননের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের বুঝানো হয় এবং পাশাপাশি আমি নিজেও যখন যে এলাকাতে যাব সেই এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এবিষয় নিয়ে মতবিনিময় করবো।
বিষয়টি নিয়ে গভীর চিন্তিত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমিন আলম। তিনি বলেন, শিশুরা মেলামেশা বা তার ভাব প্রকাশের জন্য কাউকে পাচ্ছে না। ফলে বাড়ে হতাশা ও একাকিত্ব। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিকভাবে এটি বহন করতে থাকে। ফলে এসব মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা বার্ধক্যে গিয়ে বাড়ে। শুধুমাত্র সচেতনতার মাধ্যমে আত্মহত্যার ঘটনা কমানো যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।