- চাল কিনবার য্যায়া মাথা ঘুরে
উত্তরের দারিদ্রপীড়িত জেলা কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চর বিদ্যানন্দ গ্রামের ভ্যানচালক আয়নাল মিয়ার (৫৩) সঙ্গে কথা হয় লালমনিরহাটের তিস্তা বাসস্ট্যান্ডে। চালের দামের কথা জানতে চাইলে বলেন, তোমরা হামার কথা লেখি কি করবেন, গরীবের আল্লায় আছে। বাহে বাঁচং কি করি? চাল কিনবার য্যায়া মাথা ঘুরে। সারাদিনে যা কামাই হয় তা দিয়া চাল কিনতেই সব শেষ। বাকি খরচ কীভাবে করি। সংসারই বা চলে কিরে।
দেশের সবচেয়ে বেশি গরীব জেলা কুড়িগ্রামের বেশিরভাগ নিম্ন মধ্যবিত্তের অবস্থা আয়নাল মিয়ার মতোই। উত্তরাঞ্চলের দারিদ্রপীড়িত রংপুর বিভাগের আট জেলার খেটে খাওয়া মানুষের মনের কথাই যেন বলেছেন আয়নাল মিয়া। বিশেষ করে যারা চরে বসবাস করেন, তাদের চিত্র আরো ভয়াবহ। চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি তাদের ধুঁকে ধুঁকে ভোগাচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় প্রায় এক কোটি ১৫ হাজার মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। বৃহৎ এই জনগোষ্ঠী দিন আনে দিন খায়। কেনা চালের ওপরই তাদের জীবন চলে। চালের দাম বৃদ্ধিতে এসব মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জন্য সুজন রংপুর মহানগর শাখার সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জু দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে এতো বাড়ানো সরকার ঠিক করেনি। জ্বালানির দাম বাড়ার প্রভার পড়েছে চালের বাজারে। রংপুর অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষগুলো চরম বেকায়দায় পড়েছে। আরো দাম বাড়লে এ অঞ্চলে ক্ষুধার্তের হার আরও বেড়ে যাবে। সরকারের উচিত ছিল এই বিভাগের মানুষের কথা একবার চিন্তা করা।
গেল দু’সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে কেজিতে অন্তত ৫-৬ টাকা বেড়েছে চালের দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তেলের দাম বাড়ায় তা চালের দামের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পরিবহন ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণেও মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে বলে দাবি মিলারদের। এরই মধ্যে বেড়েছে পরিবহন খরচ। এমন অবস্থায় বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এরই মধ্যে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু কোনো উদ্যোগেই চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাচ্ছে না। ফলে নাকাল হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বড় সংখ্যক মানুষ। বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দামের অজুহাতে আরো বেড়ে যাবে চালের দাম।
বর্তমানে মোটা জাতের ইরি-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫৪-৫৫ টাকায়। ইরি-২৯ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭০ আর নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, পাইকার বাজার থেকেই বেশি মূল্যে কিনে আনতে হচ্ছে চাল। মেমো অনুযায়ীই দাম নিচ্ছেন তারা।
লোডশেডিংয়ের কারণে মিল পর্যায় থেকে ট্রাক প্রতি চালের ব্যয় বেড়েছে ৪ হাজার টাকারও বেশি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে মিল থেকে আসা নতুন চাল বস্তা প্রতি দাম বাড়েছে পারে ১০০-২০০ টাকা।
এনিয়ে পাইকার ব্যবসায়ী হাসিম মিয়া বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ট্রাক ভাড়া বাড়েছে। কৃষকের উৎপাদন খরচও বাড়বে। ফলে চালের দামেও এর প্রভাব পড়বে। আরেক ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া থেকে ২৫০ বস্তার এক গাড়ি চাল আসতে খরচ লাগে ১৭ হাজার টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের উচ্চমূল্যের প্রভাবও পড়ছে চাল আমদানিতে। এছাড়া দেশি ও আমদানি করা চালের দাম এক হওয়ায় দামে প্রভাব পড়ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।