- সংসারের খরচ যেন ভয়ঙ্কর দানব
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির যে উত্তাপ তা শুরু থেকেই প্রতিটি সংসারে পড়তে শুরু করেছে। এবার এ উত্তাপ যে আরও বাড়লো। সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও চালের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। সব ধরনের চাল কেজিতে বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা। এমন দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্য আয়ের মানুষ। মানুষের ভাবনায় খরচ যেন এখন ভয়ঙ্কর দানব।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার আব্দুর রহিম (৬০)। রাজশাহী মহানগরীতে রিকশা চালান। বৃহস্পতিবার সকালে আব্দুর রহিম বলেন, আর পারিত্তি না রে বা। কি যে করি রে বা। ভাবি পাত্তি না। সংসারে তিন ছেলে আর বউ বাড়িত আছে। সারাদিন রিকশা চালি ৫০০ টাকা আয় হয়। এ টেকা দি চাল কিনমু না নুন কিনমুরে বা।
সংসারের হিসাব দিতে গিয়ে আব্দুর রহিম জানান, বা রে মাসে আয় ১৩ হাজার টাকা। এক ছাওয়াল কলেজ আরেক ছাওয়াল স্কুলে পড়িত্তে। তাগের পিছনিই মাসে ৬ হাজার যায়। বাড়িত অসুস্থ বউ। নিজে ওষুধ খাই। সবমিলি ওষুধের পিছনি খরচ যাচ্চে ২ হাজার টাকা। আর বাঁকি থাকিত্তে ৫ হাজার টাকা। কি করমু রে বা। চালের দাম যা বাড়িছে। বিদ্যুৎ বিল, তরকারি, নুন ঝালের খরচ তো মেলা বাড়িত্তে।
রাজশাহী মহানগরীর সাধুর মোড় এলাকার মিলন (৩০)। একটি বেসকারি কোম্পানিতে মার্কেটিং এর কাজ করেন। আগে থেকেই সংসারে টানাটানি। এখন চালের দাম বাড়ায় হতাশা ঘিরে ধরেছে তাকে। মিলন বলেন, সব কিছুর দাম বাড়ছে। কিন্তু বেতন বাড়ে না। কি যে করি। ভাবনায় কিছু আসছে না। মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতনে ভাড়া বাড়িতে থেকে আর চলতে পারছি না।
কয়েকদিনের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৬ থেকে ৮ টাকা।
বিক্রেতাও তেলের দাম বৃদ্ধির কথায় বলছেন। পবার পারিলার রামচন্দ্রপুর হাট এলাকার মোতলেবুর রহমান বলেন, স্থানীয় বাজারে চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। বিভিন্ন মিলের ৫০ কেজির গুটি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা। বর্তমানে নেয়া হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকা। রাজশাহীর খুচরা বাজারে প্রতিটি চাল (৫০ কেজি) বস্তায় দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধিতে এতটা বাড়ার কথা নয়। বাজার তদারকিতে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যে যার মতো দাম হাঁকাচ্ছেন। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
রাজশাহী জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সাদরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই পন্যবাহি ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে। রাজশাহী থেকে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন মোকামে যায়। তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাড়াও বেশি।