ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অযত্ন-অবহেলায় বেহাল দশা

জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার সিরাজকান্দি (নেংড়া বাজার) এলাকায় যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয় জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ। তবে অযত্নে অবহেলায় স্মৃতিস্তম্ভটি বেহাল দশায় পড়ে আছে। সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট পাকবাহিনীর এসটি রাজন ও এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ জাহাজ দুটি ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় জাহাজে থাকা অস্ত্র, গোলাবারুদ, জ্বালানিসহ প্রায় ২১ কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর ২০১৩ সালে সিরাজকান্দি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালীন উল্লেখযোগ্য স্থানে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামান।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার উপজেলার সিরাজকান্দি নেংড়া বাজার এলাকায় জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভে সরেজমিনে দেখা যায়, স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে বিভিন্ন ধরনের গাছ পালা, আগাছা জন্মে ঢেকে গেছে স্তম্ভটি। স্মৃতিস্তম্ভে বাংলাদেশের মানচিত্র নকশা তৈরি করা হয়েছিল সেটিও আগাছায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে রাতে আলো জ্বালানোর জন্য ৬টি ল্যাম্পপোস্ট লাগানো হয়েছিল এর মধ্যে একটি ল্যাম্পপোস্টও নেই। স্মৃতিস্তম্ভের দুইপাশে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে, স্মৃতিস্তম্ভের সামনে প্রায়ই মাছ, কাঁচামাল ও অনন্য সামগ্রী বিক্রি করা হয়।

অনেক সময় বালুবাহী ট্রাক রাখা হয়। বন্যার কারণে স্মৃতিস্তম্ভের গাইডওয়াল পুকুরে ধসে গেছে। পুরো স্মৃতিস্তম্ভটির মধ্য লতাপাতা গাছ গাছালি দিয়ে ভরে গেছে। অনেক সময় গরু, ছাগল প্রবেশ করছে ও ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পর মাদকের আড্ডা খানায় পরিণত হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তীতে গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে উপজেলা এলজিইডি স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ১০ লক্ষাধিক টাকার প্রকল্প নিয়ে সংস্কার কাজ করে। তবে সংস্কার কাজ টেকসই হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১১ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর এসটি রাজন ও এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩ এই দুটি জাহাজে বহন করা অস্ত্র, গোলা-বারুদ, জ্বালানি ও রসদসহ ধ্বংস করে মুক্তিযোদ্ধাগণ। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের সাহসিকতার নেতৃত্বের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরবিক্রম ও জাহাজমারা হাবিব উপাধিতে ভূষিত করে। জাহাজমারা ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে সিরাজকান্দি এলাকায় নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভটি। জাহাজমারা স্মৃতিস্তম্ভটি ইতিহাসের পাতায় চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ভূঞাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য আ. সাত্তার বলেন, এ স্মৃতিস্তম্ভটি অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। প্রশাসন এ বিষয়ে অবহিত। তবে সংস্কারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন