- ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের ভোগান্তি চরমে
- বিলীন গ্রামের পর গ্রাম
- শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব মানুষ
- চর কিসামত গ্রামেই বিলিন ১০ কিমি.
এ জমি আমার শেষ সম্বল। এর ধান দিয়েই আমার সারা বছরের খাবার জোটে। ধার দেনা করে জমিতে আমন ধানও লাগিয়েছিলাম। ভাঙন কবলিত জমি পাড়ে অশ্রুজড়ানো কন্ঠে এসব কথা বলছেন আর চোখের জল ফেলছেন আরিফ হোসেন। নীলফামারীর ডিমলা খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চর কিসামত গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিস্তা নদী পাড়ে ছিল তার ৩০ বিঘা জমি। এ জমির বেশীর ভাগ নদীতে ভেঙে গেছে।
জানা যায়, বহু বছর আগে এ উপজেলায় তিস্তা নদীর ধারে ঘেঁষে গড়ে ওঠে বিশাল আয়তনের কিসামত গ্রাম। যার সিংহ ভাগ চাষ করে নদী পাড়ের মানুষ। প্রায় ৬০ বছর ধরে ওই এলাকার লোকজন এ চরের জমিতে বাদাম, ভুট্টা, সরিষা, পাট ও ধান আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
চরের বাসিন্দা মুনছের খান জানান, প্রায় প্রতি বছর হাজার হাজার একর কৃষি জমি নদী গর্ভে ধসে যায়। এবার ৩ বিঘা জমিতে আগাম আমন ধান লাগিয়েছি।চারাও বেশ বড় হয়েছিল। উজানের ঢলে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ২০ ফুট গভীর হয়ে ওই জমি বিলীন হয়ে যায়।
ভাঙনের শিকার জমির মালিকরা জানান, প্রতিবছর তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে ফসলি জমিসহ বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। গ্রামটির ১০ কিলোমিটার এলাকা বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ভাঙনের কারণে পাল্টে যাচ্ছে কিসামত চর গ্রামের মানচিত্র। এত কিছুর পরও নদী ভাঙনরোধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে অল্প বন্যায় ভাঙন বাড়ছে বলে অনেকের ধারণা।
ইব্রাহিম, সাধু মিয়া, হেলালসহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, আমরা আর ত্রাণ চাই না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই দাবি, নদী শাসনের মাধ্যমে ভাঙনরোধ করে আমাদের বাড়িঘরসহ ফসলি জমিরক্ষা করার ব্যবস্থা করুণ।
এভাবে ভাঙতে থাকলে বর্ষা মৌসুমেই নদী গর্ভে চলে যাবে বেশ কয়েকটি গ্রাম বলে জানান। বাইশপুকুর গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ রমজান আলী।
এ নদী ঘেঁষে অবস্থিত উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গুচ্ছগ্রাম, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আশ্রয়ন কেন্দ্র, মুজিবকেল্লা ভবন, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ কোটি কোটি টাকার সরকারি বেসরকারি স্থাপনা। ভাঙনের মুখে রয়েছে পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপা খড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশা ও ঝুনাগাছ চাপানীর ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রামসহ তীররক্ষা বেড়িবাধ ও স্পার বাঁধের একাংশ।
খগাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন জানান, বছর দশেক আগেও কিসামত গ্রামে সহস্রাধিক পরিবারের বসবাস করতো। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গুচ্ছ গ্রাম, মুজিব কেল্লা, রাস্তাঘাট, বাগানসহ ফসলি জমি সবি ছিল। কয়েক বছরে তিস্তা নদীর ভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে শতাধিক পরিবার। নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বহু পরিবার।
বর্তমানে গ্রামটির চার ভাগের তিন ভাগ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদী শাসনের কোনো ব্যবস্থা না করলে কোটি কোটি টাকার সম্পদ তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়াও ওই গ্রামে প্রচুর ফসল উৎপাদন হতো। যা এ উপজেলার খাদ্য চাহিদা পূরণে অবদান রাখতো।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও- সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য সোহেল হোসান বলেন, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে নয়, নদী থেকে বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বালু পাথর উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশ উঁচুনিচু হয়ে নদি তার গতিপথ হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থায় ড্রেজিং করে নদী শাসন না করলে তিস্তার ভাঙন থামবে না।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা জানান, ভাঙনরোধে বাঁধ সংস্কার, নদী খনন ও পরিত্যক্ত সেচনালা খননের মহাপরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ চলছে।