কালিয়াকৈরে ভোর হলেই বসে দেশি মাছের হাট, বিক্রি হয় নিলামে
তুরাগ নদ ও আশপাশের বিল থেকে স্থানীয় জেলেরা নৌকা দিয়ে সারারাত জেগে মাছ ধরে ভোরে ওই বাজারে বিক্রি করে। মাছ বিক্রির আয় দিয়েই ওই এলাকার জেলেরা জীবিকা র্নিবাহ করে থাকে
একদিকে তুরাগ নদ, অন্যদিকে গ্রামটি ঘিরে আছে গোয়ালিয়া বিলের অথৈয় জলরাশিতে। জেলেদের কোলাহল নিয়েই রোজ ভোরে ঘুম ভাঙে আশপাশের বাসিন্দাদের। বিলের ধারে একটি বাজারে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট হরেক রকম মাছের বড় বাজার। এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় এ বাজারে উঠা সব মাছ। এখানে দেশীয় জাতের মাছের পসরা সাজিয়ে নিলামে ডাক হাঁকেন জেলেরা।
গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে এখানে বছরের চার মাস প্রতিদিন সকালে বসে ছোট মাছের বাজার। তুরাগ নদ ও আশপাশের বিল থেকে স্থানীয় জেলেরা নৌকা দিয়ে সারারাত জেগে মাছ ধরে আর ভোরে ওই বাজারে বিক্রি করে। মাছ বিক্রির আয় দিয়েই ওই এলাকার জেলেরা জীবিকা র্নিবাহ করে থাকে।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বাজারে পাওয়া যায় তুরাগ নদ ও গোয়ালিয়া বিলের সুস্বাদু সব মাছ। এর মধ্যে রয়েছে কই, শিং, টেংরা, পাবদা, মেনি, বাইলা, পোয়া, কাজলি, কাচকি, মলা, পুঁটি, টেকচাঁদা, দারকিনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছের কদর অনেক বেশি। এসব ছোট মাছের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে জেলেদের জালে ধরা পড়ে মাঝারি আকারের রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোরে তুরাগ নদ ও আশপাশের বিল থেকে একে একে নৌকা নিয়ে জেলেরা রঘুনাথপুর বাজারের ঘাটে নোঙর করছেন। সেখানে বসেই ছোট ছোট তরতাজা মাছগুলি প্রকার বেধে বাছাই করে খারিতে করে বাজারে উঠাচ্ছেন। বাছাই করা শেষে বাজারে উঠানো শুরু হয় সকাল ৬টা থেকে। সকাল ৬টার আগেই বাজারে দুর-দুরান্ত থেকে আসা ক্রেতা ও পাইকাররা ভিড় করেন। এরপরও শুরু হয় মাছ বিক্রির হাঁকডাক। কে কতো দাম বেশি দিয়ে নিতে পারে শুরু হয় সেই প্রতিযোগিতা। সাধারণ ক্রেতারও বেপারীর মতো ডাক দিয়ে মাছ ক্রয় করছেন। এছাড়া দেশি বিলের মাছ কিনতে পাইকার মহাজনেরা এসে ভিড় করেছেন। ঘাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। নৌকায় করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। এসব মাছের ডাক ওঠাচ্ছেন পাইকারেরা। মাছ কিনে পাইকারেরা গাজীপুরের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার সফিপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা ভোর সাড়ে ৫টায় গিয়েছেন ওই বাজারে দেশি মাছ কিনতে। এসময় তিনি জানান, বড় বড় বাজারগুলিতে বেশির ভাগ চাষের মাছ বিক্রি হয়। তুরাগ নদ বা বিলের দেশি মাছ সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই রঘুনাথপুরে বিলের মাছের বেশ চাহিদা। এ মাছের স্বাদও অনেক বেশি।
রঘুনাথপুর বাজারের ইজারাদার ও মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, সারারাত মাছ ধরে সকালে বিক্রি করা হয়। সবাই দামদর করে পছন্দের মাছ কিনে থাকে। পুরো বর্ষা মৌসুমেই চলে এ মাছের হাট। বহু পুরনো এ মাছের বাজার। এখানে আশপাশের প্রায় ৫ থেকে ৬টি গ্রামের জেলেরা মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখানে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকার দেশী মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে। বছরের বর্ষা মৌসুমের চার মাস এখানে ছোট দেশি মাছের বাজার চলে। বাকি সময় জেলারা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী বাজারের পাইকারি মাছ বিক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, তুরাগ নদ ও গোয়ালিয়া বিলের তরতাজা ছোট মাছের কদর অনেক বেশি। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার ভোজনরসিক মানুষ আগে থেকেই অনেক সময় মাছের অর্ডার দেন। এ মাছের স্বাদ যারা একবার নিয়েছেন, তাঁরা বারবার কিনতে আসেন।
পরিমল নামের এক জেলে জানান, সারারাত মাছ ধরে সকালে বিক্রি করি। গাজীপুরে একমাত্র এখানেই সবচেয়ে বেশি এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, এখানে মাছ কিনে ঠকে যাওয়ার সুযোগ নেই। সবাই দামদর করে পছন্দের মাছ কিনে থাকে। পুরো বর্ষা মৌসুমেই চলে এ মাছের হাট।
রঘুনাথপুর মাছ বাজারের সভাপতি র্দুলভ দাস বলেন, রঘুনাথপুর বাজারের যে মাছ বিক্রি হয় তার সবই দেশি এবং আশপাশের বিলের। এখানে চাষের মাছ বিক্রি হয় না। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে মাছ আসা শুরু হয় সকাল ৭টার মধ্যেই মাছ বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এ বাজারে প্রতিদিন গড়ে র্সবনিম্ন ৫০ হাজার এবং সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
কালিয়াকৈর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সলিমুল্লাহ বলেন, রঘুনাথপুরের মাছের খ্যাতি এখন গাজীপুর জেলা সদরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে প্রচুর তাজা দেশি মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে এখানকার ছোট মাছ খুবই সুস্বাদু।