শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের সব বন্দরেই থাকবে ইউএস বাংলার ফ্লাইট

দেশের সব বন্দরেই থাকবে ইউএস বাংলার ফ্লাইট
এভিয়েশনখাতে যুগান্তকারী এক নাম ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি এই বিমান সংস্থাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ইউএস-বাংলা গ্রুপের সহায়ক প্রতিষ্ঠান। ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুটি উড়োজাহাজ দিয়ে প্রথম অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। এরপর একের পর এক অনন্য নজির স্থাপনের মাধ্যমে গত প্রায় আটবছরে সাফল্যের মাইলফলকে পৌঁছে গেছে। যাত্রীসেবা, সাফল্য, আগামীর পরিকল্পনা, সাম্প্রতিক জ্বালানির দাম বাড়ার প্রভাব নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (পিআর) মো. কামরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক আনন্দবাজারের বিশেষ প্রতিনিধি।

দৈনিক আনন্দবাজার: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এভিয়েশনখাতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে?

কামরুল ইসলাম: দেশে হঠাৎ করেই জ্বালানি তেল যেমন ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিনের দাম বাড়ার ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। আমার মনে হয়, অধিকাংশ মানুষের পক্ষে এই ব্যয় নির্বাহ সম্ভব নয়। কারণ মানুষের আয় আগের জায়গাতেই রয়ে গেছে। আর মূলত এভিয়েশনখাতে যে জেট ফুয়েল ব্যবহার করা হয় তা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রতিমাসেই সমন্বয় করে। তবে গত দেড় বছরে জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ। যেখানে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে প্রতিলিটারে দাম ছিলো ৪৬ টাকা সেখানে চলতি বছরে ৭ জুলাই এসে দাঁড়ায় ১৩০ টাকায়। সে হিসাবে বলা যায়, জেট ফুয়েলের দাম ৮৩ শতাংশ বেড়েছে।

দৈনিক আনন্দবাজার: বাড়তি দামের চাপে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কতটা জরুরি?

কামরুল ইসলাম: যেখানে একটি এয়ারলাইন্সের মোট খরচের ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যয় হয় জ্বালানিতে, সেখানে এই খরচ উঠাতে ফেয়ার বা ভাড়া নির্ধারণ করা জরুরি। অথচ আমাদের এভিয়েশনখাতে ফেয়ার নির্ধারণের আগে যাত্রীদের সক্ষমতা দেখতে হয়। সেই রেশিও হিসাব করে বিমানে ভ্রমণ করা যাত্রী কমই আছেন। সেজন্য সরকারের কাছে আমাদের দাবি, জেট ফুয়েলের দাম অবশ্যই যৌক্তিক পর্যায়ে যেন রাখা হয়। অবশ্য, জেট ফুয়েলের দাম বাড়ার জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দুষছেন অনেকে। অথচ যুদ্ধ শুরু হয়েছে আজ থেকে মাত্র ৪/৫ মাস হলো। আর জেট ফুয়েলের দাম তারও অনেক আগে থেকে বেড়েছে। এক্ষেত্রে এভিয়েশন ও ট্যুরিজম খাত রক্ষায় এগিয়ে এসেছে অনেকে দেশের সরকার। অথচ খরচের আধিক্যের কারণে আমাদের এভিয়েশনখাত টিকে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

দৈনিক আনন্দবাজার: আপনারা তাহলে কীভাবে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন?

কামরুল ইসলাম: আপনারা জানেন, বিভিন্ন সময় আমাদের দেশের প্রায় ৮ থেকে ১০টি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে দুটি বেস্ট এয়ার ও এভিয়ান এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়েছে এক মাসের মধ্যেই। তখন ইউএস-বাংলার অবস্থাও খুব খারাপ ছিলো। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এখনও টিকে আছে ইউএস-বাংলা। গেল সিকি শতকে বন্ধের মিছিলে এখনও টিকে আছে ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ার। বন্ধের এই মিছিল যেন আরও দীর্ঘায়িত না হয়, এভিয়েশনশিল্প যেন আরও বেশি সুরক্ষিত থাকে সেজন্য সরকারকে আরও বেশি সুরক্ষিত-সচেতনভাবে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করতে হবে।

দৈনিক আনন্দবাজার: পদ্মাসেতু চালুর পর ফ্লাইট পরিচালনায় কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?

কামরুল ইসলাম: পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল রুটে বিমানে যাত্রী ভ্রমণ কমে গেছে। তবে আমি মনে করি আকাশপথ কখনোই সড়ক পথের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে না। যেখানে বরিশাল যেতে সড়কে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগে সেখানে বিমানে মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। বরিশাল রুটে বর্তমানে বিমান ভাড়া ৩৫০০ টাকা। সেখানে আবার ৭২৫ টাকা ট্যাক্স। বাকি টাকা দিয়ে সমস্ত খরচ বহন করতে হয়। বিভিন্ন কারণে আমাদের পরিচালন ব্যয় বাড়লেও ভাড়া বাড়েনি। পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর ঢাকা-মাওয়া থেকে ভাঙা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের কারণে অনেকে গত এক দেড় মাস ধরে সড়কপথে যাতায়াত করছেন। দেশের গর্ব পদ্মা সেতুকে একনজর দেখতে বরিশালসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অনেক যাত্রী সড়কপথে ভ্রমণ করছেন। এতে বিমানে ভ্রমণকারী যাত্রীদের সংখ্যা কিছুটা কমায় নভোএয়ার ফ্লাইট বাতিল করেছে। বিমানও ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ

দৈনিক আনন্দবাজার: এক্ষেত্রে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

কামরুল ইসলাম: এখানে একটা বিষয় মনতেই হবে, প্রত্যেক রুটে সারাবছর একরকম যাত্রী হবে এমন নয়। শীতকালে যাত্রী সাধারণত বেশি থাকলেও এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে তা কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিজনেস ম্যাকানিজমের মধ্যে কাজ করতে হয়। এক রুটে বিজনেস ভালো হলে অন্যরুটের মধ্যে সাবসিডারি দিয়ে কাজ করতে হয়। যেমন কক্সবাজার দিয়ে যেটা আয় করা সম্ভব, বরিশাল কিংবা যশোর রুটে সে ব্যবসা করা যায় না। অনেক হিসাব নিকাশ করে এখন ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। তবে যাত্রীদের সঙ্গে আমাদের করা কমিটমেন্টটা আমরা রক্ষা করে যাবো। সবগুলো রুটে ফ্লাইট পরিচালনা আমরা অব্যাহত রাখবো।

দৈনিক আনন্দবাজার: ফ্লাইট পরিচালনায় ‘ক্রস কান্ট্রি কনসেপ্ট’ ডমিস্টিকে কীভাবে কার্যকর রয়েছে? এর উদ্দেশ্য কী?

কামরুল ইসলাম: অভ্যন্তরীণ রুটে ‘ক্রস কান্ট্রি কনসেপ্টে’ ফ্লাইট পরিচালনা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শীতকাল বেইজড কার্যক্রম পরিচালনা করে। সৈয়দপুর-কক্সবাজার, যশোর-কক্সবাজার, যশোর -চট্টগ্রামে এটি পরিচালনা করা হয়। ভবিষ্যতে সিলেট-কক্সবাজার এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে এই ফ্লাইট চালু করা হবে। এর মাধ্যমে আমরা দেশের সবগুলো বিমানবন্দরকে একটি শক্ত নেটওয়ার্কের মধ্যে আনতে কাজ করছি। যাতে সবগুলো বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করা যায়।

দৈনিক আনন্দবাজার: আন্তর্জাতিক কয়টি রুটে আপনারা ফ্লাইট পরিচালনা করছেন? রুট বাড়ানো নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

কামরুল ইসলাম: বর্তমানে ইউএস-বাংলা আন্তর্জাতিক রুটে ১১টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। রুটগুলো হলো- মাসকাট, দোহা, শারজাহ, দুবাই এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, মালেশিয়া কুয়ালালামপুর, চীনের গুয়াংজু, ভারতের চেন্নাই এবং কলকাতা। এছাড়া ৪ আগস্ট থেকে ঢাকা-কলকাতা রুটে ৪টা ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট চেন্নাই যাচ্ছে। শিগগিরই ঢাকা-দিল্লি, ঢাকা-আবুধাবি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে চট্টগ্রাম-কলকাতা রুট আর ব্যাংকক রুট চালু হবে। যাত্রার শুরুর পর থেকেই আমরা মালদ্বীপে প্রথম ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। পরে তা বাড়িয়ে ৪টি করা হয়েছে।

দৈনিক আনন্দবাজার: আমেরিকা ও ইউরোপের কোন কোন দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে ইউএস-বাংলা?

কামরুল ইসলাম: আগামী ২০২৪ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যেমন লন্ডন এবং রোমে বিশেষ করে, যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশি সেসব দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করবে ইউএস-বাংলা। এছাড়া ২০২৫ সালে কানাডার টরেন্টোতে এবং নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু করবে ইউএস-বাংলা।

আরও পড়ুনঃ  ফাইলবন্দি বাণিজ্যের স্বপ্ন

দৈনিক আনন্দবাজার: বর্তমান আপনাদের বহরে কতগুলো বিমান আছে?

কামরুল ইসলাম: বর্তমানে আমাদের বহরে মোট ১৬টি বিমান আছে। এদের মধ্যে বোয়িং Boeing 787-800 মডেলের ৬টি এয়ারক্রাফট, ৭টি ব্র্যান্ড নিউ ATR 72-600 মডেল এবং Bombardier Desh 8-Q400 মডেলের ৩টি। এছাড়াও চলতি বছরের মধ্যে আমাদের বহরে আরো যুক্ত হবে সাতটি নতুন এয়ারক্রাফট। এগুলোর মধ্যে ৪টি বোয়িং এয়ারক্রাফট রয়েছে।

দৈনিক আনন্দবাজার: ইউএস-বাংলা এভিয়েশন একাডেমির কথা দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছে। কবে চালু হবে? এতো দেরির কারণ কী?

কামরুল ইসলাম: ইউএস-বাংলা ২০১৪ সালে যাত্রার শুরু থেকে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাজ করছে। ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ একটা এভিয়েশন একাডেমি তৈরির জন্য সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কাজ শুরু করছি আমরা। যা এখনো অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে রয়েছে। এটি হবে ঢাকা বেইজড পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশন একাডেমি। বর্তমানে কয়েকটি একাডেমি কাজ করছে শুধু পাইলট ট্রেনিং নিয়ে। এ ক্ষেত্রে আমরা সুসংগঠিতভাবে কাজ শুরু করতে চাই। এতে পাইলট, এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হাওয়ার সুযোগ থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে যেসব বেসিক বিভাগ ক্রেবিন ক্রু, সেলস এন্ড মার্কেটিং, রিজার্ভেশন সিস্টেম ব্যবহার করছি প্রত্যেকটি জিনিস এ কোর্সে আনার চেষ্টা করছি। এই একাডেমিতে শিক্ষার্থীরা প্রাকটিকেলি এয়ারলাইনস ব্যবহারের সুযোগ পাবে। এসব কিছু মিলিয়ে আমরা একটা অর্গানাইজডওয়েতে একটু সময় নিয়ে কাজ করছি। বিগত দিনে দেখেছি, বাংলাদেশে অনেক এভিয়েশন একাডেমি হয়তো শুরু করেছে। সেটা আসলে বিক্ষিপ্তভাবে পাইলট ট্রেনিংয়ের জন্য কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য কাজ করেছে। এর আগে পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশনকে বেইজড ধরে কেউ একাডেমি করেনি। সে জায়গায় থেকে আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশে এভিয়েশন এক্সপার্ট তৈরি করতে। সে ধরনের বেসিক বেইজড নিয়ে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি।

দৈনিক আনন্দবাজার: বাংলাদেশ এভিয়েশন একাডেমি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতাগুলো কোথায়?

কামরুল ইসলাম: বাংলাদেশ বর্তমানে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্স (পিপিএল) এবং কমার্শিয়াল পাইলট সার্টিফিকেট (সিপিএস) কোর্স করাচ্ছে কিছু ট্রেনিং একাডেমি। এ কোর্সগুলো করার জন্য যে পারফেক্ট এয়ারক্রাফট দরকার, গ্রাউন্ড কোর্সের জন্য ভালো প্রশিক্ষক দরকার আমি মনে করি তা ‘আপটু দ্যা মার্ক’ না। বাংলাদেশের এভিয়েশন যতটুকু এগিয়েছে, সে জায়গায় দক্ষকর্মী তৈরিতে আমাদের এভিয়েশন সেক্টরের আরও সক্রিয় হওয়ার দরকার ছিলো। এয়ারলাইনস বলতে পাইলট কিংবা ইঞ্জিনিয়ার না। এখানে সেলস মার্কেটিং, রেভিনিউ ম্যানেজমেন্ট, রেভিনিউ অ্যাকাউন্টিং, পিআরটাও এখানে একটা ফ্যাক্টর আছে। এখানে শেখার আর জানার আছে। অনেক টেকনিক্যাল টার্মস আছে। সেই বেসিকগুলো জানার জন্য আমাদের পূর্ণাঙ্গ কোনো একাডেমি নাই।

দৈনিক আনন্দবাজার: যাত্রা শুরুর পর গত আট বছরের পথযাত্রায় সাফল্য ব্যর্থতা?

কামরুল ইসলাম: ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। একটা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে এয়ারলাইনস নিয়ে আসে ইউএস-বাংলা। তখন আমাদের আগে বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ছিলো। শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিলো আমরা বিজনেস কম্পিটিশনের চেয়ে সার্ভিস কম্পিটিশন করবো। আমার মনে হয়, গত ২৫ বছর ধরে দেশের বিমানযাত্রীরা একটা ভালো সার্ভিস চেয়ে এসেছেন। তবে তখন এভিয়েশনখাতে যেসব সার্ভিস হোল্ডার ছিলো তাদের কাছ থেকে যাত্রীরা কাঙ্ক্সিত সার্ভিস পাচ্ছিলেন না। ইতোমধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এবং জিএমজি এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে। এই যে বন্ধ হওয়ার মিছিল দিনকে দিন দীর্ঘ হচ্ছিলো। সেখানে গত ৮ বছর ধরে আমাদের ডেভলপমেন্ট আছে। আমাদের টার্গেটই ছিলো দেশের যত এয়ারপোর্ট আছে তার সবগুলোতেই ফ্লাইট পরিচালনা করা। এক বছরের মধ্যেই আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া দুবছর শেষ হওয়ার আগে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। ২০১৬ সালের ১৫ মে কাঠমান্ডুতে ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। তৃতীয় বছর লক্ষ্য ছিলো বহরে বড় এয়ারক্রাফট যুক্ত করার। সেখানে বোয়িং ৭৩৭ ৮০০ পরিচালনা করেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্য ছিলো মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটি বেশি আছেন সেসব দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করবো। এছাড়া আগের যেসব দেশে বাংলাদেশি কমিউনিটি বেশি সেখানেও প্রত্যেকটা জায়গায় ফ্লাইট পরিচালনা করবো।

আরও পড়ুনঃ  ফের ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম

সেই সঙ্গে আমাদের বড় টার্গেট ছিলো, এটা আমাদের অর্জনও ছিলো যে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কোনো এয়ালাইনস চায়না সিভিল এভিয়েশনের সব রকমের কমপ্লাইনস মেনে ন্যাশনাল ক্যারিয়ারসহ যেখানে কেউই ফ্লাইট পরিচালনা করার সুযোগ পায়নি, সেখানে ইউএস-বাংলা চার বছরের মাথায় ঢাকা টু চায়নার গুয়াজু রুটে প্রতিদিন ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংককে বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করা হয়।

দৈনিক আনন্দবাজার: এর মধ্যেই তো কোভিডের ধাক্কা? কীভাবে সামাল দেয়া হয়?

কামরুল ইসলাম: হ্যাঁ, সেটা ঠিক। কোভিডের সময় দুই বছর যেখানে সারাবিশ্বে এভিয়েশনখাত নানাভাবে বিপর্যস্ত, তখন বাংলাদেশি একটা এয়ারলাইনস হিসাবে বিভিন্ন দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত আনতে কাজ করেছে। সরকার আমাদের সহযোগিত করেছে। ওই সময় আমরা দেড়শ ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। তখন আর্থিক সমস্যার কারণে প্যাসেঞ্জার এয়ারলাইনস দিয়ে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। কোনো না কোনোভাবে যাতে আর্থিক সংস্থান হয়। আমরা চেয়েছি সবাই যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। তখন অনেক এয়ারলাইনস কর্মী ছাঁটাই করলেও ইউএস-বাংলা সেই সময়েও কাউকে ছাঁটাই করেনি। এছাড়া আমরা ৫০ শতাংশ কমে অনেক দিন কাজ করেছি। যখন আমাদের ব্যবসা আবারও ভালোর দিকে যাচ্ছে তখন আবারও বেতনটা সেই আগের জায়গা চলে গেছে।

সবকিছু মিলিয়ে লম্বা সময়ের মধ্যে বহরে মাত্র দুটি এয়ারক্রাফট নিয়ে যাত্রা শুরু করার পর এখন বহরে ১৬টি এয়ারক্রাফট আছে। সবশেষ আমরা মালদ্বীপে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছি। দেখেন স্বাধীনতার পর আমরা তিনটি ডেসটিনেশনে কাজ করেছি। যেটা ন্যাশনাল ক্যারিয়ার কখনও ট্রাভল করেনি- চেন্নাই, মালে, গুয়াংজু। এই ডেসটিনেশনগুলো বিজনেস এবং স্ট্রেন্থ ধরে রেখেই কাজ করছে ইউএস-বাংলা। ভবিষ্যতে আমরা বাংলাদেশের পাশাপাশি এশিয়ার একটি পাইওয়ানির এয়ারলাইনস হতে চাই।

দৈনিক আনন্দবাজার: পুঁজিবাজারে আসার কোনো ইচ্ছা আছে কি না?

কামরুল ইসলাম: পুঁজিবাজারে আসার মতো আপাতত আমাদের কোনো ইচ্ছা নেই। কারণ বাংলাদেশের এভিয়েশন পুঁজিবাজারে একটা ভালো রেজাল্ট নিয়ে আসতে পারেনি। কারণ ইউনাইডে এয়ার মানুষকে একটি খারাপ পরিস্থিতে ফেলে দিয়েছে।

দৈনিক আনন্দবাজার: সময় দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
কামরুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন