ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে চলছে এক লাখ পাঁচ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্প রাইস সাইলোর নির্মাণকাজ। ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে শেষ করার কথা থাকলেও নানান কারণে তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যে গত এক বছরে প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালের মে মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা নিয়ে দেখা নিয়েছে অনিশ্চয়তা।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে কাজের ধীরগতি থাকলেও বর্তমানে কাজ চলছে পুরোদমে। তৃতীয় দফায় বাড়ানো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জেলা খাদ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করে খাদ্য অধিদপ্তর। এসব চাল বিভিন্ন জেলায় বিতরণের পর উদ্বৃত্ত চাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বড় কোনো সাইলো না থাকায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাদ্য সংরক্ষণ এবং মজুদ পর্যাপ্ত ও মজবুত করতে আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ও পরিকল্পনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও টাঙ্গাইলে আটটি সাইলো নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আধুনিক স্টিল রাইস সাইলোটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা। সাইলোর নির্মাণ কাজের জন্য ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড-ফ্রেমি জয়েন্ট ভেঞ্চারের সঙ্গে চুক্তি হয় খাদ্য অধিদপ্তরের। চুক্তি অনুযায়ী আধুনিক এ সাইলোতে মোট ৩০টি সাইলো বিন থাকবে।
এছাড়া পরিদর্শন বাংলো, গোডাউন ও ব্যারাকসহ প্রয়োজনীয় ভবন থাকবে ১৬টি। সাইলো বিনগুলোর ধারণক্ষমতা প্রতিটি ৩ হাজার ৫০০ টন। ইতোমধ্যে ২৯টি সাইলো বিনের অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে বিনগুলোতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সংযোজনসহ আনুষাঙ্গিক সকল কাজই বাকি আছে। আর একটি বিনের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। সাইলোর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় অধিকাংশ মালামাল চীন, আমেরিকা ও ইতালি থেকে আনতে হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এসব মালামাল আনতে বিলম্ব হয়েছে। যার কারণে গত এক বছরে এ কাজে ধীরগতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পে থাকা ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ চলছে। সীমিত পরিসরে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক প্রকল্পের কাজ করছেন। তবে কোনো ভবনের নির্মাণ কাজই শতভাগ সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া মেঘনা নদীতে জেটি নির্মাণ কাজও বাকি রয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. নিজামুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ২৪ মার্চ থেকে পরবর্তী ৪ মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। এরপর কাজ শুরু হলেও অনেক কাজের অগ্রগতি আশানুরূপ ছিল না। করোনায় সাইলোর প্রয়োজনীয় মালামাল বিদেশ থেকে আনতে বিলম্ব হয়েছে। যার কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে। তবে বর্তমানে পুরোদমে প্রকল্পের কাজ চলমান। আশা করা যাচ্ছে বর্ধিত নির্ধারিত সময়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে।
আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল করিম শেখ বলেন, ২০২৮ সালের এপ্রিলে ৫৪০ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক স্টিল রাইস সাইলো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তিনবার প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। গত বছর এ সময়ে কাজের অগ্রগতি ছিল ৭২ শতাংশ। আর বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। এক বছরে কাজের ধীরগতি হওয়ার নানান কারণ ছিল। এর মধ্যে ঠিকাদারের আর্থিক সমস্যা, করোনার প্রভাবসহ নানা সমস্যা ছিল। তবে বর্তমানে পুরোদমে কাজ চলছে। ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে আশা করছি।
সম্প্রতি আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার প্রকল্প এলাকা পরির্দশনে আসেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নির্মাণাধীন ১ লাখ ৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক স্টিল রাইস সাইলোর কাজ করোনা অতিমারিতে অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে পিছিয়ে গেছে। তবে কাজের অগ্রগতি বারবার পিছিয়ে গেলেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে না। ব্যয় ঠিক রেখে শুধু সময়টা তিনবার বাড়ানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২৩ সালের মে মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।