সরকারের অনত্যম স্লোগান ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবার পর প্রঞ্চম বা ৫-জি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল দেশে। সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্য ছিল ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ৫জি প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল সেবা প্রদান করার প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটনের কিছু এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে ৫জি প্রযুক্তি চালু করার। এর মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে ৫জি প্রযুক্তি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি ও অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের ৫জি সেবা চালুকরণে উৎসাহিত করা হবে। তবে শেষ পর্যায়ে এসে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থায় ও ডলার সংকটের কারণে প্রকল্পটি থেকে সরে এসেছে সরকার।
দেশের রিজার্ভের ডলার সাশ্রয়ে টেলিটকের ৫জি প্রকল্প স্থগিত করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গতকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় টেলিটকের ৫জি সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনার সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন আগে ৪জি সেবা উন্নতি করা উচিত। সেইসঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করার লক্ষ্যে এ প্রকল্প স্থগিতের নির্দেশ দেন একনেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, যেহেতু সরকার কৃচ্ছ্রতা সাধন করছে এবং টেলিটকের ফাইভ জি প্রকল্পের বড় অংশই আমদানি নির্ভর। তাই ডলার ব্যবহারের ওপর চাপ কমাতেই প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয়েছে। আর আপাতত দেশে ফাইভ জি কাভারেজের চেয়ে ফোর জির পরিধি বাড়ানো জরুরি। সেই আঙ্গিকে মোবাইল অপারেটরদের কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
এর আগে, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় টেলিটকের নেটওয়ার্ক বাণিজ্যিকভাবে চালু করার উদ্যোগ নেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এজন্য বিভাগটি ২৩৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হয়।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গণভবনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারি গূরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ, মোহাম্মদপুর, শের-ই-বাংলা নগর, বনানী গুলশান, ক্যান্টনমেন্ট ও উত্তরা থানা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বঙ্গভবন ও সচিবালয়সহ মতিঝিল, রমনা শাহবাগ, ধানমন্ডি থানার সহকারী গুরুত্বপূর্ণ ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় প্রকল্পটির এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে ছিল- টেলিটকের ঢাকা শহরে বিদ্যমান ২০০টি ৪জি বিটিএস সাইটে ৫জি প্রযুক্তিনির্ভর টেলিকম যন্ত্রাদি সংযোজন, টাওয়ার ও কক্ষ অবকাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার করা। বিদ্যুৎ সংযোগের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা, রেকটিফায়ার ও ব্যাটারি ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা। এছাড়া এনটিটিএন অপারেটর হতে ভাড়াভিত্তিতে প্রস্তাবিত ২০০টি ৫জি সাইটে উচ্চগতির লাস্টমাইল ট্রান্সমিশন সংযোগ স্থাপন করা। ৫০টি সাইটে মাইক্রোওয়েভ রেডিও যন্ত্রাদি স্থাপন এবং ১ লাখ গ্রাহক ক্ষমতাসম্পন্ন আইএমএস প্ল্যাটফর্ম স্থাপন ও বিদ্যমান কোর নেটওয়ার্ক সিস্টেমের প্রয়োজনীয় আপগ্রেডেশন ও সম্প্রসারণ করা।
এদিকে একনেকে উত্থাপিত বাকী ৭ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আজকের সভায় মোট ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলোতে সরকারি অর্থায়নে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৮৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ৫৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সাহায্য ১২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো
‘কক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা উন্নত করতে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদী বরাবর পোল্ডারগুলোর পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ২২৭ কোটি টাকা। ‘বিনা’র গবেষণা কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প। এতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬৪ কোটি টাকা। ‘নির্বাচিত পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর জন্য বেলারুশ থেকে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ’ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি টাকা।
‘উত্তরা লেক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’প্রকল্পে ৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন’প্রকল্পে ব্যয় হবে এক হাজার ২২৪ কোটি টাকা। ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ’প্রকল্পের ব্যয় ১৬২ কোটি টাকা। ‘কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, রাজশাহী (১ম সংশোধিত)’নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫ কোটি টাকা।
সভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।