ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পচাতে কষ্টেও দামে খুশি

পচাতে কষ্টেও দামে খুশি

নাটোরে সোনালী আঁশে সুবাতাস

পাট কাটা, পঁচানো, ধোয়া, রোদে শুকানো কষ্ট হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য পেয়ে দারুণ খুশি চলনবিল অধ্যুষিত এলাকা গুরুদাসপুরের পাটচাষিরা। গতকাল শনিবার নাটোরের সর্ববৃহৎ পাট বিক্রির হাট বাণিজ্যনগরী চাঁচকেড় গিয়ে পাটচাষিদের সঙ্গে কথা বলে কষ্ট ও তুষ্টির কথা উঠে আসে।

পাট কাটা শুরু হয়েছে প্রায় মাসাধিক সময় হলো। তবে পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কষ্টের সীমা ছিলো না চাষিদের। কোনো রকমে খাল, পুকুর, ছোট জলাশয়ে পাট জাগ দিয়ে আঁশ ছড়ানোর কাজ করেন তারা। এরপর রোদে শুকিয়ে তা বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন আড়তে। মৌসুমের শুরুতেই পাটের দামও পাচ্ছেন আশানুরুপ। এতে হাসি ফুটছে এ অঞ্চলের চাষিদের মুখে।

গুরুদাসপুর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর গুরুদাসপুরে পাটের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩ হাজার ৮শ’ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫০ হেক্টর বেশি পাট চাষ হয়েছে। পাটের গড় উৎপাদন হচ্ছে বিঘা প্রতি ৯ থেকে ১০ মণ হারে। দেশি ও তোষা জাতের পাট এ এলাকায় বেশি চাষ হয়।

উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের পাটচাষি রেজাউল করিম জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আবাদও ভালো হয়েছে। এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় খালে-বিলে পানি না থাকায় শ্রমিক খরচ এবং কৃষকের কষ্টটাও বেশি হয়েছে। তবে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় সকল কষ্ট ভুলে গেছেন তারা।

উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের রওশনপুর গ্রামের পাটচাষি জয়নাল হোসেন তার চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করে ফলন পেয়েছেন ৩৬ মণ। প্রতি মণ বিক্রি করেছেন ৩ হাজার ২শ’ টাকা দরে। পাট চাষে খরচ হয়েছিল প্রতি বিঘায় আট হাজার টাকা। খরচ বাদে পাট বিক্রি করে লাভ হয়েছে প্রায় ৭৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে পেয়েছেন কিছু পাটখড়ি। সেগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন।

চাঁচকৈড় পাটহাটার  ইজারাদার ইসলাম মোল্লা জানান, জেলার সর্ববৃহৎ পাটের হাট বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় বাজার। এখানে ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, খুলনা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল থেকে আড়ৎদারেরা সপ্তাহে ৪দিন সোম, মঙ্গল, শুক্র ও শনিবারে পাট ক্রয় করতে আসেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ ট্রাক করে পাট দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। পাটের বাজারমূল্য প্রকারভেদে সর্বনিম্ন ২৬শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৩২শ’ টাকায় ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।

নরসিংদীর মধাবদী থেকে আসা মহাজন পরিতোষ সাহা বলেন, এখানকার পাট উন্নতমানের হওয়ায় প্রতি বছর কিনতে আসি। মৌসুমে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার পাট কিনে মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করি। এতে অধিকাংশ মৌসুমেই সম্মান জনক লাভ হয়।

উপজেলার তালুকদার পাড়ার আড়তদার মিলন তালুকদার জানান, প্রতি মন পাট ক্রয় করেন ২ হাজার ৬শ থেকে তিন হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত। এখন পাটের আমদানি একটু কম হচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর প্রচুর পরিমাণে নতুন পাট আড়তে আসবে। তবে এবার পাটের দাম খুব একটা কমবে না বলেই মনে হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন, পাটচাষে তেমন একটা খরচ নেই। বীজ কেনা এবং মাঝে দুটি নিড়ানি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি খরচ হয় সর্বোচ্চ সাত থেকে আট হাজার টাকা। এবছর পানি না থাকায় খরচ একটু বেশি পড়েছে। তবে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। সরকার কিছু ক্ষেত্রে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহার হচ্ছে। পাটচাষকে আরও বেশি  লাভজনক করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় কমে আসবে, উৎপাদনও বেশি হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন