ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অচেনা শ্রাবণে পুড়ছে আমন

অচেনা শ্রাবণে পুড়ছে আমন

চলনবিলের নাটোরের বড়াইগ্রামে ভরা বর্ষাতেও চলছে তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টি। ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে মাঠ-ঘাট। এতে বোনা আমনের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, রোপা আমন রোপণের মৌসুমও চলে যাচ্ছে। আর তীব্র খরায় জমিতেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে উপযুক্ত সময়ের আগেই পাট কেটে ফেললেও জাগ দেওয়ারও পানি না থাকায় চরম বেকায়দায় পড়ছেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার বোনা আমন চাষ করা হয়েছে তিন হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। মোট ৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। আর রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৫ হেক্টর। তবে প্রচণ্ড খরার কারণে রোপা আমনের চারা রোপণ এখনও শুরু করা যায়নি।

প্রতি বছর আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে বৃষ্টির পানিতে আমন ধান রোপণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষক। কিন্তু এবার দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে কৃষকেরা ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। কেউ কেউ সেচ দিয়ে বীজতলা তৈরি করলেও খরায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর যারা বোনা আমনের চাষ করেছেন তাদের বেশির ভাগ জমিই পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।

সময় মতো বৃষ্টির পানি না পেলে এসব জমির ধানের চারা মরে যাওয়ার আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এ কারণে অধিকাংশ চাষি অর্থ খরচ করে জমির আগাছা পরিষ্কার করাসহ ধানের পরিচর্যা করা থেকে বিরত থাকছেন। কেউ কেউ আগাছাসহ ধানের চারা কেটে নিয়ে গরুকে খাওয়াতেও দেখা গেছে। খরার কারণে কিছুটা খর্বাকৃতির পাটগাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, কোনো কোনো জমিতে পাটের গাছ মরতে শুরু করেছে।

উপজেলার বড়াইগ্রাম সদর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের কৃষক আবু রায়হান মন্ডল বলেন, আমি মোট ৬ বিঘা জমিতে বোনা আমনের চাষ করেছি। কিন্তু গত দেড় মাস যাবৎ বৃষ্টির দেখা নেই। এতে আমার বেশির ভাগ জমি ফেটে গেছে। এসব জমির ধান গাছের বৃদ্ধি হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পুরো জমি থেকে দশ কেজি ধানও পাবো না।

একই গ্রামের বর্গাচাষি মবিদুল ইসলাম বলেন, জীবিকার তাগিদে প্রত্যেক বছর বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে বৃষ্টির পানিতে ধানের আবাদ করি। এবার বেগতিক অবস্থা। এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে চাষ দিতে পারিনি। তাই ধানও লাগাতে পারছি না। যাদের টাকা-পয়সা আছে তারা সেচ দিয়ে বীজতলা তৈরি করলেও খরায় পুড়ে যাচ্ছে।

রোলভা গ্রামের কৃষক তপন কুমার হোড় বলেন, ভেবেছিলাম আষাঢ় মাসে বৃষ্টি হবে, কিন্তু আষাঢ় শেষে শ্রাবণও চলে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। এতে বোনা আমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আর বৃষ্টি না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিনে সেচ দিয়ে রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করেছিলাম, তাও রোদে পুড়ে মরে যাচ্ছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের কৃষক হাসানুল বান্না উজ্জল বলেন, এবার পৌনে চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। কিন্তু প্রচন্ড খরায় পাটের গাছ আকারে বাড়েনি। এখন আবার সেসব পাট শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। তাই তাড়াতাড়ি করে পাট কাটলেও জাগ দেয়ার পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছি। বাড়ির পাশের একটি ডোবায় পানি দিয়ে কোনো রকমে পাট জাগ দিয়েছি। খরার কারণে এবার পাটের গাছ আকারে বড় না হওয়ায় কাঙ্ক্সিত পরিমাণে পাটের আঁশ পাওয়া যাবে না বলে তিনি জানান।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে খরার প্রকোপ চলছে। ফলে কিছু কিছু জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। তবে এখনও যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে এসব জমির বোনা আমনের তেমন ক্ষতি হবে না। আবার পানির অভাবে যারা রোপা আমন ধান লাগাতে পারছেন না, তারাও লাগাতে পারবেন। এছাড়া খরার কারণে পাটের গাছ আকারে বৃদ্ধি কম হয়েছে, কিছু পাট গাছ শুকিয়েও যাচ্ছে। তবে পাট কেটে জাগ দিতে পারলে কৃষকরা একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, হয়তো ফলন কিছুটা কম হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন