ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরফ সংকটে পচছে ইলিশ

বরফ সংকটে পচছে ইলিশ

লোডশেডিংয়ে বিপাকে বরফকল মালিকরা

  • পদ্মা সেতুর কারণে দ্রুত ইলিশ পরিবহন

মাছ ধরার ওপর পয়ষট্টি দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। সেসব মাছ নিয়ে তারা আসছেন মৎসবন্দরে। জেলে, শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে পুরো মৎসবন্দর। চলছে হরদম বেচাকেনা। কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে মৎস্য আড়তগুলো। সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় আড়ৎদার ও জেলেরা যেমন খুশি তেমনি চড়া দামে হতাশা হয়ে পড়েছেন পাইকারি ক্রেতা ও বিক্রেতারা। তবে এই হতাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ইলিশ সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ বরফ সংকট। যে কারণে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মৎস্য ব্যবসায়ীদের।

বরফকল মালিকরা বলছেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় বরফ তৈরিতে সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ী ও আড়ৎদারেরা বলছেন, চাহিদা মতো বরফ না পাওয়ায় মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ কিংবা সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক মাছ নষ্ট বা পচেও যাচ্ছে। এতে বেশি মাছ ধরার পর দাম কমার যে সুফল সাধারণ ক্রেতাদের পাওয়ার কথা সে ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।

তবে অনেকেই বলছেন, সাগরের মাছ দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠাতে বেশি সময় লাগতো। তবে এখন পদ্মা সেতু হওয়ার পর কম সময়েই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাচ্ছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বেশি মাছ সংরক্ষণে সমস্যা হওয়ায় অনেকেটাই হতাশ হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সাগরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় সেই হতাশা কেটে যাচ্ছে অনেকেরই।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিন আগেও যেখানে ছিল সুনসান নীবরতা, সেই মৎস্যবন্দর মহিপুর আলিপুরে এখন মানুষের কোলাহলে মুখরিত। গভীর সমুদ্র থেকে একের পর এক মাছ ধরা ট্রলার বোঝাই হয়ে আসছে মাছ। আর টুকরিতে করে শ্রমিকরা মাছ তুলে নিয়ে যাচ্ছেন আড়তে। সেই মাছ বিক্রি করছেন আড়ৎ মালিকার। কিনে নেয়া মাছ প্রক্রিয়াজাত করে ক্রেতারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছেন। এসব আড়ৎ ঘাটের সামনে মাছ পরিবহনের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রাক ও পিকআপ।

জেলে ও স্থানীয়রা জানান, সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জাল ফেলে এফ বি মুরছালিন ১২০ মণ, এফ বি প্রিন্স ১৮০ মণ, এফ বি আব্দুল সত্তার ১৫০ মণ, এফ বি মফিজ ৭৫ মণ, এফ বি খালেক ৯৫ মণ, এফ বি তামান্না ট্রলারে ১০ মণ মাছ পেয়েছে। এসব মাছ তারা স্থানীয় আড়তে বিক্রি করেছে। তবে বড় সাইজের মাছ ৪৮ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। মাঝারি সাইজের মাছ ২৪ থেকে ২৫ হাজার ও ছোট মাছ সাইজের মাছ ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

এফবি জুবায়ের ট্রলারের মাঝি আনিসুর রহমান বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে গিয়ে প্রথম বারের মতো জাল ফেলে তিন লাখ বার হাজার টাকার মাছ পেয়েছেন। তা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রয়োজনীয় বাজার করে নিয়ে আবারও মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে রওয়ানা করবেন বলে তিনি জানান।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ি মো.মনির হাওলাদার বলেন, এক সময় ফেরি যোগাযোগের জন্য গন্তব্যে পৌঁছাতে অপেক্ষা করতে হতো দীর্ঘ সময় ধরে। ফেরিঘাটে যানজটে আটকা পড়ে নষ্ট হয়ে যেত অনেক মাছ। এখন এই মৎস্যবন্দরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মৎস্য বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে দক্ষিণের সামুদ্রিক মাছ।

আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, বর্তমানে গভীর সমুদ্রে বেশ ইলিশ ধরা পড়ছে। তবে কিনারে তেমন ইলিশ পড়ছে না। তাই ছোট ছোট ট্রলারের জেলেরা আশানুরূপ মাছ পাচ্ছে না। এছাড়া সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেদের জালে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পরায় জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে অনন্দ বিরাজ করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন