রাশিয়া-ই্উক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিলো বেশ কয়েকটি দেশে। অস্থির হয়ে উঠেছিলো বিশ্ববাজার। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া চুক্তির ফলে একে একে খুলে গেছে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো। যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারে। কিছুটা কাটতে শুরু করেছে অস্থিরতা। ফিরতে শুরু করেছে স্বস্তি। ধারাবাহিকভাবে কমছে গমের দাম। তবে প্রভাব পড়েনি দেশের খুচরাবাজারে। কমেনি প্যাকেটজাত আটা-ময়দার দাম। যদিও পাইকারিতে কিছুটা কমেছে খোলা আটা-ময়দার দাম।
আন্তর্জাতিক বাজারের হালনাগাদ তথ্য দেয় বিজনেস ইনসাইডার। ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৭ মে’র পর থেকেই নিম্নমুখী গমের বাজার। সর্বশেষ গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে প্রতি টন গম বিক্রি হয়েছে ৩৪২ ডলারে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন আটা-ময়দার দাম ৫১ শতাংশ বেশি। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ৪৮-৫৫ টাকা ও ময়দা ৬২-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একবছর আগে যথাক্রমে ৩৩-৩৫ এবং ৪২-৪৫ টাকা ছিল।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বেড়েছে পুরোনো এলসির গম আমদানি। আমদানি বাড়ায় বন্দরে কমেছে গমের দাম। প্রতি কেজি গমের দাম ৫ থেকে ৬ টাকা কমেছে। তবে গতকাল শনিবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬ টাকায় এবং খোলা ময়দা ৫৪-৫৬ টাকায়। তবে এ সময়েই আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। দেশের পাইকারি বাজারেও আটার দাম কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের বাজারে বিশ্ববাজারের নিম্নমুখী দামের সুফল পেতে আরও সময় লাগবে। কারণ কম দামের গম এখনো বাজারে আসেনি।
এ বিষয়ে টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হায়দার বলেন, এখনো কম দামের গম দেশে আসেনি। যে গম দিয়ে আমরা এখন আটা-ময়দা করছি সেগুলো আগের কেনা। সেটা দিয়ে এখনো দাম পুষিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। গম আমদানি করলে সেটা আসতে অনেক সময় লাগে। ভারত হলে সেটা এক সপ্তাহে আসতো। কিন্তু ভারত থেকে গম আসছে না। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে গম আসতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। কৃষ্ণসাগরের মাত্র একটি ভুট্টার শিপমেন্ট হয়েছে। এখনো বাজারে কোনো অফার নেই।
হিলি পানামা পোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক বলেন, বন্দরে আমদানিকৃত গম ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রুত ছাড় করতে পারেন সেদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ সজাগ আছে। ২৬ কর্মদিবসে ভারত থেকে ৩৬১টি ট্রাকে পুরোনো এলসির ১৪ হাজার ১৬৪ টন গম আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।
ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির জন্য কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো খুলে দিতে দেশটির সঙ্গে গত ২২ জুলাই চুক্তি করেছে রাশিয়া। জাতিসংঘ-সমর্থিত ওই চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনের বড় বন্দর ওদেসাসহ তিনটি বন্দর খুলে দেওয়ার কথা। এসব বন্দরে বিপুল পরিমাণ গম আটকা পড়েছিল। এই খবরে দেশের পাইকারি বাজারে গমের দাম কমেছে। এতে পাইকারি পর্যায়ে কমেছে আটা-ময়দার দামও। বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা আটার দাম ২ হাজার ১শ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ হাজার ৭শ টাকা। বস্তাপ্রতি ময়দার দামও কমেছে প্রায় ২০০ টাকা।
ভারত থেকে গম আমদানির নিষেধাজ্ঞা এখনো সমাধান হয়নি। পুরোনো এলসির কিছু কিছু গম এখন ভারত থেকে আসলেও নতুন এলসি খোলার সুযোগ নেই। তবে সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে কিছু গম আমদানির চুক্তি করেছে। সরকারি পর্যায়ে আমদানির সুযোগ রয়েছে।
গত অর্থবছরের শেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে গমের আমদানি বেশ কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মাত্র ৪০ লাখ টন গম। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি ছিল ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার টন। তার আগের বছর (২০১৯-২০ অর্থবছর) গম আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন।