- জেলের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে
সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক। নিষেধাজ্ঞার শেষ রাত থেকে ইলিশ শিকারে সারি সারি ফিশিংবোটে সমুদ্রযাত্রা করে উপকূলের কয়েক হাজার জেলে। ইলিশের ভরা মৌসুমে সাগরে কাঙ্খিত মাছের দেখা পেলেও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার অর্ন্তগত নদীর চিত্র একেবারে ভিন্ন। আশা বেঁধে জেলেরা নদীতে গিয়েও ফিরে আসে আশাশূণ্য হয়ে। জ্বালানি খরচ মিটাতেও বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। নদীতে আশানুরূপ মাছ না থাকায় ব্যবসায়ীক ক্ষতির মুখে রয়েছে আড়ৎদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
উপজেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, নিষেধাজ্ঞার পর থেকে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এটিই সাফল্য। ইলিশ মাছ নোনা পানিতে ডিম ছাড়তে পারে না। ডিম ছাড়ার জন্য মিঠা পানি দরকার। সে জন্য গভীর সমুদ্র থেকে ভিতর নদীতে মাছ উঠে আসে। ডিম দেয় শেষ হলে আবার গভীর সমুদ্রে চলে যায়। ধারণা করছেন, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নদীতে আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলবে।
এ উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ১২ হাজার ৮২০ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। এছাড়াও অনিবন্ধিত রয়েছেন আনুমানিক তিন হাজারের মত।
‘আগুনমুখা নদীতে মাছ ধরে ঘাটে ফিরেছেন জেলে সুমন মাতব্বর। হাতের চার আঙ্গুলে চারটি মাছ গেঁথে নিয়ে যাচ্ছেন আড়দে। তার হাতে থাকা চারটে মাছের তিনটা ঝাটকা আর একটি বড় সাইজের। সে সময় নদীতে কিরকম ইলিশ ধরা পড়ছে জানালেন সে কথা। তবে কথাগুলো বলতে তেমন আগ্রহ এবং মুখে হাসিঁ ছিল না। তবুও তিনি বললেন, বছর তিনেক আগেও এই আগুনমুখা নদীতে মাছের কমতি ছিল না। মাছ ধরে আমাদের সংসার চলতো। সে বছর মাছ বেশি পাওয়ায় দারদেনা এবং এনজিও ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। কিন্তু টানা দুই বছর ধরে নদীতে তেমন মাছ ধরা পড়ে না। যে সঞ্চয় ছিল তা তো নদীতে ঢেলে দিয়েছি। এরপরেও মানুষের থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে মাছের কারবার (ব্যবসা) করতে হচ্ছে। আমার জন্ম জেলের ঘরে, এটাই আমাদের মূল পেশা। এর বাহিরে কোন কর্মতেই মন বসে না, যখন মাছের কথা শুনি। এখন দৈনিক দুই হাজার টাকা মত খরচ হয় নদীতে গেলে। আর মাছ পাই পাঁচ থেকে ছয়শত টাকার। যত দিন যাচ্ছে তত ঋণী হচ্ছি।’
শুধু জেলে সুমন নয়, এরকম চিত্র উপজেলার চরমোন্তাজ, মৌডুবী, রাঙ্গাবালী ও ছোটবাইশদিয়া মৎস্যঘাটে জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
কোড়ালিয়া মৎস্য ব্যবসায়ী সভাপতি জহির হাওলাদার বলেন, ‘সরকার যে সময় যে অবরোধ দেয় আমরা তা মেনে চলি। অবরোধ শেষ হইছে এক সপ্তাহ হইছে। এখন সাগরে ইলিশ মাছের দেখা মিলছে। সাগরের ট্রলার আমাদের ঘাটে ভিড়ে না। আমরা নদী সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী। নদীতে মাছ পড়লে আমাদের পাল্লায় মাছ উঠে আর না পড়লে জিমিয়ে থাকে এ ঘাট। নদীতে তেমন মাছ না থাকায় জেলেরাসহ ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে আছি।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল হক বাবুল বলেন, ‘আশা করছি এক দেড় মাসের মধ্যে নদীর জেলেদের জালে কাঙ্খিত মাছ ধরা পড়বে। যার ফলে জেলেরা সকল ক্ষতি মিটিয়ে আর্থিকভাবে সচল হবে।’