ঢাকা | শুক্রবার
২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে তুচ্ছ ঘটনায় গৃহবধূর উপরে হামলা

রাজবাড়ী জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে লিলি বেগম (২৬) নামে এক গৃহবধূর উপরে হামলা করেছে তার চাচী শাশুড়ী ও চাচাতো দুই দেবর। হামলায় গুরত্বর আহত অবস্থায় গৃহবধূকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে তার স্বজনেরা। এ ঘটনায় সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে লিলির শশুর আ. রাজ্জাক।

গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের কাঁচরন্দপুর গ্রামে গৃহবধূ লিলির শশুর বাড়িতে। বর্তমানে আহত লিলি রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মহিলা সার্জারী ওয়ার্ডের ১৫নং বেডের পাশে মেঝেতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আহত লিলি বেগম কাঁচরন্দপুর গ্রামের রাজু সরদারের স্ত্রী ও পাশের গ্রাম মতিয়াগাছীর ইকবাল উদ্দিন খানের মেয়ে। লিলির ৪ বছর বয়সী তালহা নামের এক ছেলে সন্তান রয়েছে। হামলার ঘটনায় অভিযুক্তরা হলো, লিলির চাচী শাশুড়ী ফরিদা বেগম(৪৫), তার বড় ছেলে জিমবাত ওরফে বাবু(২৪) ও ছোট ছেলে শাকিব(২০)।

থানায় অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, হামলাকারীদের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে জমিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে। এরই জেরে হামলাকারীরা লিলির শশুর বাড়ির লোকজনকে খুন জখমসহ ক্ষয়ক্ষতি করার পরিকল্পনা করে সুযোগ খুজছিলো। ঘটনার দিন ২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হামলাকারীরা লোহার রড, কাঠের বাটাম ও বাঁশের লাঠিসোটা নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। লিলি রান্না ঘরে তখন রান্না করছিলো। এসময় লিলি হামলাকারীদের কে গালাগালি করতে নিষেধ করে। তখন ফরিদা বেগমের হুকুমে তার দুই ছেলে লিলিকে রান্না করা অবস্থায় চুলের মুঠি ধরে টেনে হিচরে এলোপাথারীভাবে কিল, ঘুষি, চড় ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্নস্থানে নীলাফোলা জখম করে। লিলি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে হামলাকারীরা তাকে লোহার রড, কাঠের বাটাম ও বাঁশের লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট করে তাকে শারীরিকভাবে আহত ও লাঞ্চিত করে। এসময় তার গলায় থাকা দেড় ভড়ি ওজনের সোনার চেইন ও ঘরের বিছানার নিচে থাকা সাড়ে ১৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। লিলির আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসলে হামলাকারীরা হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।

সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুয়ে আছে গৃহবধূ লিলি বেগম। তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমার বৃদ্ধ শশুর ছাড়া বাড়িতে অন্য কেউ ছিলোনা। এ সুযোগেই হামলাকারীরা বাড়িতে আসে ও আমার উপরে হামলা করে। আমাকে যারা এভাবে মারপিট ও লাঞ্চিত করছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

লিলির শশুর বৃদ্ধ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার ছেলের বৌকে আমার ছোট ভাই জসিম উদ্দিনের স্ত্রী ফরিদা ও তার দুই ছেলে বাবু ও শাকিব বেধড়ক মারপিট করেছে। আমি সদর থানায় অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় শাস্তির দাবি জানান তিনি।

লিলির স্বামী রাজু সরদার বলেন, আমি জীবিকার তাগিদে ঢাকায় কাজ করি। ঘটনার দিনে আমি ঢাকাতেই ছিলাম। সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে রাজবাড়ীতে ছুটে আসি। হামলাকারীরা আমার চাচী ও চাচাতো ভাই। তারা দীর্ঘ দিন ধরে জমিজমাসহ নানাবিধ কারণে আমাদের পরিবারের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে। বাড়িতে আমার বৃদ্ধ বাবা, স্ত্রী, সন্তান ও বোন থাকে। আমার স্ত্রীর উপরে এমন অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমি তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

লিলির ছোট বোন শান্তা খাতুন বলেন, হামলার শিকার হয়ে আমার বোন জীবন বাচাতে ছুটে তার বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। মূমুর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আমরা রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি করেন।
এ ঘটনার বিস্তারিত জানতে সরেজমিনে শুক্রবার হামলার ঘটনাস্থল বরাটের কাঁচরন্দপুর গ্রামে গেলে সেখানে অভিযুক্ত ফরিদা বেগম কে পাওয়া গেলেও তার দুই ছেলে বাবু ও শাকিব কে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত বাবু ও শাকিব পালিয়ে গেছে।

অভিযুক্ত ফরিদা বেগম বলেন, ঘটনার সময়ে দুটি নারিকেল গাছের চারা নিয়ে লিলির সাথে আমার ঝগড়া হয়। লিলি অকথ্য ভাষায় আমাকে গালাগালি করে। এ সময় আমার বড় ছেলে বাবু বাড়িতে এসে উত্তেজিত হয়ে লিলিকে মারপিট করেছে। তবে আমার ছোট ছেলে শাকিব তখন বাড়িতে ছিলো না।
প্রতিবেশি আকলিমা বেগম বলেন, এদের বাড়িতে প্রায় প্রতিনিয়তই ঝগড়া লাগে। ঘটনার দিন চিৎকার চেচামেচি শুনেছি।

লিলির ছোট চাচী শাশুড়ি রেশমা বেগম বলেন, চিৎকার শুনে আমি দৌড়ে এসে দেখি বাবু লিলির চুলের মুঠি ধরে রেখেছে। পরে আমরা ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেছি।

গৃহবধূ লিলির নোনদ স্কুল শিক্ষিকা চম্পা খাতুন বলেন, আমার ভাবী লিলি কে আমার চাচী ফরিদা ও তার দুই ছেলে বাবু ও শাকিব বেরধক মারপিট করেছে। এ ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও তারা আমার উপরেও হামলা করেছে। আমার চাচাতো ভাইরা আমাদের কে নিয়মিত মারপিট করে। মহিলাদের উপরে নির্যাতনের বিচার আমরা প্রশাসনের কাছে চাই।

লিলির স্বামী রাজুর ফোপাতো ভাই ফণির স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, ঘটনার সময়ে আমি দেখেছি যে লিলি কে কয়েকজন মিলে বেধড়ক মারপিট করছে। মহিলার উপরে এমন নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাই।
রাজবাড়ী সদর থানার এস আই মো. বোরহান উদ্দিন জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন