নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার তীরবর্তী ও চরাঞ্চল ৬ ইউনিয়নের বাসিন্দারা স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তিস্তা নদীবেষ্টিত এসব ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র থাকলেও সেখানে স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তার যান না নিয়মিত। বিশেষ করে বৃদ্ধ, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা রয়েছেন সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। চরাঞ্চলে বন্যার সময় পানিতে তলিয়ে যায় টিউবওয়েল ও টয়লেট। বানের পানিতেই প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় অধিকাংশ মানুষকে। আবার এ পানিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করতে হয়। এতে পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, চর্মরোগ প্রভৃতি সমস্যা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ ডাক্তারের জন্য উপজেলা বা জেলায় যোগাযোগ দুরূহ ব্যাপার।
স্বাভাবিক সময়েও নদী তীরবর্তী জনগোষ্ঠী বা চরাঞ্চলের মানুষ সারা বছরই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বসবাস করে। উপজেলার চর কিসামত, ঝাড়সিংহেরশ্বর, টাপুরচর, খোগার চর, চর খড়িবাড়ি, স্বপন বাঁধ, ভেন্ডাবাড়ি, বাইশপুকুরসহ বিভিন্ন গ্রামের নদী ভাঙনকবলিত ভূমিহীন ও দরিদ্র মানুষ কোনো কুলকিনারা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বসতি গড়েন এসব চরাঞ্চলে। প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর নানাবিধ সমস্যাকে ছাপিয়ে সামনে চলে এসেছে চিকিৎসা সুবিধার বঞ্চনা। প্রসূতি মায়েদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে।
চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, বন্যা চরাঞ্চলের মানুষের শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই করে না, স্বাস্থ্যসেবারও দারুণ সংকট তৈরি করে। একদিকে নদীপথ, সেখানে নেই নৌকার নিশ্চয়তা। অন্যদিকে ধুধু বালুচর। তিস্তা নদীরক্ষা বাঁধগুলোও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কিসামত চরের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, অসুস্থ রোগী নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে নদীর ঘাট পর্যন্ত আসতেই লেগে যায় অনেক সময়। ঘাটে দিনেই সব সময় নৌকা থাকে না, রাতে তো প্রশ্নই আসে না। এসব ক্ষেত্রে চরবাসীর অসহায়ত্ব সীমাহীন। রোগীকে নিয়ে শহরের হাসপাতালে পৌঁছতে লেগে যায় অনেক সময়, আর যাতায়াতে ব্যয় হয় তাদের সমর্থের চেয়েও অধিক টাকা।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সাধু মিয়া ও হেলাল খান বলেন, এ এলাকার প্রসূতি মায়েরা শহরে যেতে যেতে বাচ্চা প্রসব হয়ে যায়। দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও গর্ভবতী মায়েদের জন্য এ দুর্গম এলাকায় চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া দুর্গম এলাকা হওয়ায় সিএইচসিপি কর্মীরা সপ্তাহে ১ বা ২দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে আসেন। যে ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা হয় তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ৬ হাজার মানুষ বাস করেন চরাঞ্চলে।
তিনি বলেন, ইউপির পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা থাকলেও চরাঞ্চল হওয়ায় চিকিৎসকরা আসেন না। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, এ ইউনিয়নে একটি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ও দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও কোনোটিতেই এমবিবিএস চিকিৎসক আসেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান জানান, আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসক সংকট। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু পারা যায় চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো দেখভালের জন্য স্থানীয় কমিটি আছে। এটা তারাই দেখভাল করেন বলে জানান তিনি।