ঢাকা | শনিবার
২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“প্লিজ, সংবাদটি ছাপাবেন না”

প্লিজ, সংবাদটি ছাপাবেন না!
  • স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া গ্রামবাসী হতভম্ব

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের জোতপাড়া গ্রামে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি করা হলেও প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দের চাল আর টাকা আত্মসাৎ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এতে স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া গ্রামবাসী হতবাক হয়ে গেছেন।

জোতপাড়া গ্রামবাসী এমন অনিয়মে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন। যদিও অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধি পোরজনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাবু ও একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য সেরাজুল শেখ ঘটনার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছেন।

স্থানীয়রা জানান, জোতপাড়া গ্রামের জনৈক পলাশের নেতৃত্বে গ্রামের আব্দুস সামাদ শেখ, রতন শেখ, তোফাজ্জল, শাহ আলম, আব্দুর রহিমসহ অর্ধশত গ্রামবাসীর বেহাল রাস্তা নির্মাণে এগিয়ে আসেন। চলতি বছরের গত জানুয়ারি মাসে তাদের স্বেচ্ছাশ্রমে জোতপাড়া নওশের মোল্লার বাড়ি হতে জাবেদের বাড়ি ও এফআবি রাস্তা থেকে রাজ্জাকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করা হয়।

স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ কাজে জড়িত থাকা পোরজনা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. শফিকুল ইসলাম আমজাদ, আব্দুল সামাদ শেখ, রাজ্জাকসহ অনেকেই বলেন, আমরা সবার কাছ থেকে টাকা তুলে, বলা যায় ভিক্ষা করে প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় করে রাস্তাটি নির্মাণ করেছি। তখন সবার উদ্যম উৎসাহ দেখে চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাবুল তখন রাস্তা নির্মাণে দেড় লাখ টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, অন্য প্রকল্প থেকে নিয়ে সেই টাকা দিয়েছে আমাদের।

হাজী মো. শফিকুল ইসলাম অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তা নির্মাণ হয়েছে আজ থেকে সাত মাস আগে স্বেচ্ছাশ্রমে। আর এখন এসে জানতে পারছি চেয়ারম্যান আর মেম্বার মিলে প্রকল্পের নামে রাস্তা দেখিয়ে প্রায় ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা পুরোই আত্মাসাৎ করেছেন। আমরা চেয়ারম্যান মেম্বারের বিচার দাবি করছি।

এদিকে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পে জোতপাড়া নওশের মোল্লার বাড়ি থেকে জাবেদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের নামে ৫ লাখ ১৪ হাজার ৭০৩ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। একই সঙ্গে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে জোতপাড়া এফআবি রাস্তা হতে রাজ্জাকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের নামে প্রায় ৭ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়।

তবে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত রাস্তাকে প্রকল্প দেখিয়ে এসব টাকা ও চাউল আত্মসাত করেন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও মেম্বার সেরাজুল শেখ। জানতে চাইলে প্রকল্প দুটির সভাপতি ও ইউপি মেম্বার সেরাজুল শেখ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, আমার সই দিয়ে চেয়ারম্যান টাকা তুলে নিয়েছেন। তাহলে টাকা কে আত্মসাৎ করেছে? পরে বলেন, আমি টাকা তুলিনি। টাকা তুলেছেন চেয়ারম্যান। সেরাজুল শেখ আরও বলেন, আমার সই দিয়ে চেয়ারম্যান টাকা তুলে নিয়েছেন। আমি সেই টাকা চেয়ে বার বার তাগাদা দিলেও তিনি আমাকে টাকা দেননি। বিষয়টি নিয়ে তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পোরজনা ইউপি চেয়ারম্যান অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন বাবুর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে ইউপি সদস্য সেরাজুল শেখের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, সে টাকা তুলে নিয়েছে, আমি কেন টাকা তুলবো? এ সব ব্যাপারে প্রকল্প কর্মকর্তার সঙ্গে বোঝেন গিয়ে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমের রাস্তাকে প্রকল্প বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।

প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন ব্যাপারে জানতে চাইলে শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘প্লিজ সংবাদটি ছাপাবেন না’।

জানতে চাইলে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম কোনা বক্তব্য দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি লিখে দেন ইউএনও এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন’।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন