টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের শালিয়াবহ দক্ষিণপাড়া গ্রামের ইদ্রিছ আলী। একসময় বড়শি দিয়ে মাছ ধরা ছিল তাঁর নেশা ও পেশা। গ্রামের মানুষ তাঁকে ডাকত বড়শিওয়ালা বলে। শখের বশে সাপ ধরতে গিয়ে এখন হয়েছেন ‘সাপওয়ালা’।
লোকজনের ডাকে বাড়িতে গিয়ে বিষধরসহ নানা জাতের সাপ ধরেন তিনি। সাপ ধরে দিলে অল্পবিস্তর পারিশ্রমিক পান। মূলত সে অর্থেই এখন তাঁর সংসার চলে। গত সোমবার বিকেলে শালিয়াবহ দক্ষিণপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের গ্রাম থেকে অনেকেই সাপ দেখার জন্য ইদ্রিছ আলীর বাড়িতে এসেছে। সেখানেই কথা হলো তাঁর সঙ্গে। তিনি শোনালেন বড়শিওয়ালা থেকে তাঁর সাপওয়ালা হওয়ার কাহিনি।
একসময় খালে-বিলে-নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরা ছিল ইদ্রিছ আলীর পেশা। তখন বাজারে মাছ বিক্রির আয় দিয়েই সংসার চলত তাঁর। জঙ্গুলে টিলা এলাকার অদূরে হওয়ায় তাঁর গ্রামে সাপের বিচরণ একটু বেশিই। আজ থেকে তিন বছর আগে গ্রামের বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মুসার বাড়িতে শখের বশে সাপ ধরতে গিয়েছিলেন। সেই থেকে এর নেশায় পড়ে যান। ৬৪ বছর বয়সে এসে তিনি জড়িয়ে পড়েন সাপ ধরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশায়।
ইদ্রিছ আলী জানান, সাপ ধরার কোনো ‘তন্ত্রমন্ত্র’ জানেন না তিনি। কোনো সাপুড়ের কাছে গিয়ে প্রশিক্ষণও নেননি। মনের জোর দিয়েই তিনি সাপ ধরেন। কারো বাড়িতে সাপ দেখা গেলে ফোন করলেই তিনি হাজির হন। এমনকি নিজের জেলার বাইরে থেকেও সাপ ধরার ডাক পড়ে তাঁর।
শুধু গত ১৫ দিনেই বিভিন্ন স্থান থেকে তিনি গোখরা, দাঁড়াশসহ বিভিন্ন জাতের ১০০টির বেশি সাপ ধরেছেন, বললেন ইদ্রিছ আলী।
ইদ্রিছ আলীর ছেলে মাসুদ জানান, সাপ ধরতে গিয়ে তাঁর বাবা কয়েকবার দংশনের শিকার হয়েছেন। মাসুদ দাবি করলেন, একটি বিশেষ ঔষধি গাছের গুঁড়া নিয়মিত সেবন করার কারণে সাপে দংশন করলেও তাঁর বাবার শরীরে কোনো বিষক্রিয়া হয় না।
বাড়ি থেকে সাপ ধরে বিপদমুক্ত করার পারিশ্রমিক হিসেবে ইদ্রিছকে লোকে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দেয়। এ নিয়ে তিনি কোনো দর-কষাকষি করেন না। সাপ ধরার পারিশ্রমিক সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন বলে জানান তিনি।
সাপের বিচরণ সারা বছর সমান থাকে না। তাই সাপ ধরার আয় দিয়ে তাঁর সংসার চালাতে কষ্ট হয়। লোকজন প্রায়ই ডাকে বলে এ কাজ ছাড়তেও পারছেন না। শালিয়াবহ গ্রামের আজিজুল ইসলাম ও ঠাণ্ডু মিয়া জানান, ইদ্রিছ আলী মানুষের বিপদ দেখে বসে থাকতে পারেন না। ছুটে যান সাপ ধরতে। ইদ্রিছ আলী দুঃখ করে বলেন, আমি যে সব সাপ ধরি তার বেশির ভাগই বাড়ির মালিকরা মেরে ফেলেন। তখন আমার খুব খারাপ লাগে। আমার নিজের থাকার ঘরই নেই, সেখানে সাপগুলো ধরে এনে কিভাবে সংরক্ষণ করব। সরকারের পক্ষ থেকে বা ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ একটা খামার করে দিলে সেখানে ধরা সাপগুলো নিরাপদে রাখতে পারতাম।