- অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানোর ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক অভিভাবককে প্রধান শিক্ষকের জুতা দিয়ে পেটানোর ঘটনায় গত দুই দিন ধরে কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না আসায় শিক্ষকরা ক্লাসরুমেই সময় পার করছেন। গতকাল সোমবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষার্থী আসে নাই। এসময় ওই বিদ্যালয়ে প্রায় ৭ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ক্লাসরুমে এবং লাইব্রেরীতে বসে সময় পার করছেন।
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই উপজেলার পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবি দেরিতেই স্কুলে আসার বিষয়ে বললে ওই বিদ্যালয়ের এক অভিভাবককে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তার পায়ের জুতা দিয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় ১৯ জুলাই দুপুরে প্রধান-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ওই এলকাবাসী ও বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা মহাসড়কে মানববন্ধন। এ ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্থানীয় ১১জন অভিভাবক এর বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
সরেজমিনে ওই বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রয়েছেন। তবে, কোনো শিক্ষার্থী নেই। প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জন শিক্ষক শিক্ষিকা ক্লাস রুমে বসে এবং কয়েকজন লাইব্রেরীতে বসে সময় পার করতে দেখা গেছে।
অভিভাবকরা দাবি করেন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ছবির বদলী না হওয়া পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠাবে না বলে তারা জানান। অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবির ক্ষমতার অপব্যবহার, অভিভাবককে জুতা দিয়ে পেটানো, দায়সারা দায়িত্ব পালন, সময়ের ব্যাপারে উদাসীনতা, বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য উপকরণ সংকট, শিক্ষার্থীদের স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামের বিস্কুট বাড়িতে নিয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান-শিক্ষিকার সহ সাতজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন।
ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর স্কুলের না আসায় আমরা প্রত্যেক অভিভাবকদের বাড়িতে গিয়েছি। অভিভাবকদের দাবি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বদলি না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে পাঠাবেন না।
ওই বিদ্যালয়ের অভিভাবক রেজাউনুল হক বাবু বলেন, একজন অভিভাবক কে জুতা দিয়ে পেটানো মানে সব অভিভাবক কে জুতা দিয়ে পিঠা তাই আমরা লজ্জিত হয়ে ওই বিদ্যালয় কোন কোন বাচ্চা পাঠাচ্ছি না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বদলি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোন বাচ্চা স্কুলে পাঠাবো না। এদিকে আমাদের নামে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেছেন ওই প্রধান শিক্ষিকা।
এ বিষয়ে পশ্চিম সারডুবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুন্নাহার ছবি বলেন, স্কুলের কোন শিক্ষার্থী না আসায় আমরা প্রত্যেক অভিভাবকদের বাসায় গিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার অভিভাবক সমাবেশ ডেকেছি। তিনি আরও বলেন, বিশৃঙ্খলা এড়াতে আমি ওই এলাকার ১১ জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ করেছি। জুতা দিয়ে পেটানো ঘটনাটি অসত্য বলে তিনি দাবি করেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) জাকির হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি। সমাধানের জন্য একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।
লালমনিরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম নবী জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসছে না বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। এ বিষয়ে আমাকে কেউ কিছুই জানায়নি।
