আবহমান বাঙালি জাতির ঐতিহ্য ও শতবর্ষের প্রাচীন সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নৌকা বাইচ। নদীমাতৃক এ দেশের গ্রামীণ লোক সাংস্কৃতির সেই ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও বিল-বাওড়ে আয়োজন করা হয় নৌকা বাইচের। এরই ধারাবাহিকতায় বাসাইলের দিগন্ত বিস্তৃত জলভরা দৃষ্টিনন্দন বাসুলিয়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে গত শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। থৈথৈ জলে, ঢাক-ঢোলের তালে তালে গ্রাম বাংলার গান আর মাঝি-মাল্লার বৈঠার ছন্দ মাতিয়ে তোলে বাসুলিয়ার চাপড়া বিলের শান্ত জলের ঢেউকে। আর সেই তালে তাল মেলাতে নৌকা বাইচ দেখতে বিশাল বিস্তৃত চাপড়া বিলের বুকে নামে লাখো দর্শনার্থীর ঢল ।
বাসাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবদুল মালেক মিয়া স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রতি বছরের মতো এবারও এ নৌকা বাইচের আয়োজন করেন । এতে জেলার অন্যতম বিনোদনমূলক এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলা ও টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলা থেকে জলপথে নৌকা আর সড়কপথে যানবাহনে অসংখ্য মানুষের সমাগম হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো।
প্রতিযোগিতায় নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পাবনা ও টাঙ্গাইলে কয়েকটি উপজেলা থেকে আল্লাহ ভরসা, মায়ের দোয়া, সোনার তরী, হিরার তরী, ফুলের তরী, আদর্শ তরী, ময়ূর পঙ্খী, পঙ্খীরাজ ও জলপরীসহ বাহারী নাম ও রঙের ডিঙি, কুশা, সিপাই, খেলনা, অলংগাসহ কয়েক ধরনের প্রায় অর্ধশতাধিক নৌকা অংশগ্রহণ করে। ছোট, বড় ও মাঝারি নৌকা পৃথক কয়েকটি রাউন্ডে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত পর্বে টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরে নিকড়াইলের ‘ নিউ হীরার তরীথ নৌকাটি চ্যাম্পিয়ন হয়। রানার্সআপ হয় নাগরপুর উপজেলার হারানো মানিক নৌকা। পরে অতিথিবৃন্দ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ সময় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপসহ অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি নৌকাকেই আকর্ষণীয় পুরষ্কার দেওয়া হয়।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গণির সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন। বিশেষ মেহমান ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, বরেণ্য অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহম্মদ কায়সার, প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব খালিদ হোসেন খান পাপ্পু।
প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আব্দুস সামাদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আমিন শরীফ সুপন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের বলেন, নৌকা আমার অস্তিত্ব, বাংলাদেশ আমার অস্তিত্ব, বঙ্গবন্ধু আমার অস্তিত্ব, তারই আলোকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ ধারাবাহিতা ভবিষ্যতেও অব্যহত থাকবে।