- স্কেভেটর-ড্রাম ট্রাক জব্দ
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর ইউনিয়ন অপরাধীদের অভয়ারণ্যখ্যাত ‘আলীনগর’। খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, নোয়াখালীর সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, খুন-গুম মামলার আসামিরাই সলিমপুরের এই আলীনগর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাতের বেলা দূরে থাক, দিনেও যেতে আতংকে থাকেন। এখানে সীতাকুণ্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হাতেগোনা। এভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অপরাধীরা এসে আস্তানা গড়ে তোলে জঙ্গল সলিমপুর সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। আর তারা জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় খুন, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসার পাশাপাশি স্কেকেভেটর দিয়ে বিশাল বিশাল পাহাড় কেটে প্লট ও মাটি বিক্রির কাজ করে থাকে। পাহাড়ি এ দুর্ভেদ্য সাম্রাজ্যে স্থানীয়রা ছাড়া বাইরের কেউ প্রবেশ করতে চাইলে নিতে হয় অনুমতি। এটা দীর্ঘ বহু বছরের নিজের গড়া আইন। আর এ আইনটি তৈরী করেছে এ সাম্রাজ্যের স্বঘোষিত রাজা মো. ইয়াসিন। এটি যেন বাংলাদেশের মধ্যে অন্য এক বাংলাদেশ।
প্রথমবারের মতো এ সাম্রাজ্যে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলার যৌথ বাহিনী। গত শুক্রবার সকাল থেকে দিনব্যাপী আলীনগরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর, র্যাবের যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। এতে বিভিন্ন বাহিনীর শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে আলীনগরের সরকারি শত শত একর পাহাড় কাটার দৃশ্য দেখা যায়। এসময় দূর্ঘম পাহাড় থেকে মাটি কাটার তিন স্কেভেটর, ৫টি ড্রাম ট্রাক ও দুটি ট্রাক জব্দ করা হয়। সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম এ অভিযান চালান।
এসময় ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ দেখে ভূমিদস্যুরা পালিয়ে গেলেও পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত ৩টি স্কেভেটর , ৫টি ড্রাম ট্রাক ও দুইটি ট্রাক জব্দ করা হয়।
এর আগে, গত ১৫ জুলাই শুক্রবার স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মাসুদ কামাল, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মং মারমা ও সীতাকুণ্ড উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম ও স্থানীয় সলিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ আলীনগর পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে চেয়ারম্যানের গাড়ি থেকে নামিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আরিফকে বেধড়ক মারধর করে ইয়াসিন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। এ সময় সবার সামনে মেম্বার আরিফের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে তারা। এ ঘটনায় আরিফ মেম্বারের ছোট ভাই আবদুল আলীম বাদী হয়ে ইয়াসিন, ফারুকসহ ৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। এরপরই সোমবার দুপুর ১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থেকে ডিবি পুলিশের সহায়তায় ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের একটি দল।
সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে জনপ্রতিনিধিকে মারার ঘটনার পরই আলোচনায় আসে মোহাম্মদ ইয়াসিন ও জঙ্গল সলিমপুর।
সীতাকুণ্ড ভূমি অফিসের তথ্যমতে, জঙ্গল সলিমপুর মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের বিএস ২০১ দাগে ১৮ দশমিক ৭৭ একর, ২০৩ দাগে ৪৩২ দশমিক ৯৯ একর, ২১২ দাগে ০ দশমিক ০৭ একর, ২৬২ দাগে ৩ দশমিক ৭০ একর, ২৭৮ দাগে ৩৯ দশমিক ৬৫ একর, ৩৫০ দাগে ২০০ দশমিক ১০ একর, ৩৫১ দাগে ৪৮ দশমিক ৫০ একর, ৩৫২ দাগে ৩ দশমিক ৪০ একর, ৩৫৫ দাগে ৭৪ দশমিক ৭৫ একর, ছুট খতিয়ানের ৩০৯, ৩৪৯, ৩০৭ দাগ ও ১৯ নম্বর খতিয়ানের বিএস শ্রেণি পাহাড়, ২০২ দাগে ০ দশমিক ৯৯ একর ছড়া এবং ২১২ দাগে ০ দশমিক ০৭ একর শ্রেণি নাল থাকার কথা। কিন্তু ৪০টির বেশি পাহাড় কেটে ওখানে তৈরি করা হয়েছে অন্তত ২০ হাজার প্লট এবং সরকারি হাজার হাজার একর পাহাড় দখল শেষে সেসব কেটে প্রতিদিনই নতুন নতুন প্লট তৈরি করে যাচ্ছে প্রভাবশালী ইয়াসিন বাহিনীরসহ ভূমিদস্যুরা।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম, জেলা পরিষদ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সীতাকুণ্ড সার্কেল) আশরাফুল করিম, চট্টগ্রাম পরিবেশ উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার, মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ, র্যাবের সহকারী পরিচালক জিন্নাতুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যবৃন্দ।
এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, জঙ্গল সলিমপুরের দূর্গম এলাকা আলীনগরে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হয়। এখানে পাহাড় খেকোরা সরকারী শত শত একর পাহাড় কেটে অবৈধভাবে আবাসন গড়ে তুলেছে। রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নয়, এই ম্যাসেজটি আমরা সকল দুষ্কৃতকারীকে দিতে চাই। আমাদের সীতাকুণ্ডের মাটিতে কেউ অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলবে তা আমরা হতে দিব না। সরকার জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছে। খুব শীঘ্রই উচ্ছেদসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হবে (পাশাপাশি প্রকৃত ভূমিহীদের পুনর্বাসন করা হবে)। অভিযানে আমরা ৩ টি স্কেভেটর, ৬ টি ড্রাম ট্রাক ও ১ টি ট্রাক জব্দ করেছি।
