- প্রয়োজন সঠিক সুবিধা-নীতি সহায়তা
সঠিক সুবিধা ও নীতি সহায়তা পেলে ঔষধ শিল্প দেশের পোশাকখাতের মতো রপ্তানিতে বিশাল অবদান রাখার সক্ষমতা রাখে। পোশাকের বিশ্ববাজার যেখানে ৭০০ বিলিয়ন ডলারের সেখানে ওষুধের বিশ্ববাজার ৮২৫ বিলিয়ন ডলারের। যার ৫ শতাংশ বাজার দখল করতে পারলে দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি খাতের মাধ্যমে দেশের মোট রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। দেশে এখন সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের বাজারের পাশাপাশি ১৮০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হচ্ছে এ খাত থেকে। তবে ২০২৬ সালের পর স্বল্প উন্নত দেশে পরিণত হওয়ায় ওষুধের দাম বেড়ে যাবে দেশে।
গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে ঔষধ খাতের রপ্তানি : কৌশল নির্ধারণ’- শীর্ষক সেমিনার এসব কথা ওঠে আসে। ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তরণের পর রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ৮-১৫ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হতে পারে, যার ফলে আমাদের মোট রপ্তানি ১৪.২৮ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এর মূল্য প্রায় ৫.৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রিজওয়ান রাহমান বলেন, অর্থনৈতিক এ উত্তরণের পর ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশী পণ্যের মেধাসত্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তবে এর পর আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের ঔষধখাতকে প্রবল প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। সেই সাথে কমবে রপ্তানি। ডিসিসিআই সভাপতি উল্লেখ করেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের স্বার্থে মেধাসত্ত্ব আইন গ্রহণের জন্য আমাদের বেসরকারিখাতকে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং সেই সাথে সরকারের পক্ষ হতে প্রণোদনা প্রদানের করা একান্ত অপরিহার্য। এছাড়াও দেশীয় ঔষধ শিল্পের গবেষণা খাতের উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, ঔষধখাতে আমাদের অর্জন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক এবং দক্ষ মানব সম্পদের উপস্থিতির কারণে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ শিল্পে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়েছে তাই আমাদের আরো বেশি হারে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে মনোনিবেশ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপি বেশি হারে বায়োলজিক্যাল ড্রাগ উৎপাদনের প্রবনতা আগামীতে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি ঔষধের প্রশাধিকারের বিষয়ে তিনি অত্যন্ত আশাবাদী এবং একবার এটা করা সম্ভব হলে ঔষধ খাতের বৈশ্বিক ইমেজ তৈরিতে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে এখাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়াও তৈরি পোশাক খাতের সুবিধাসমূহ দেশের রপ্তানিমুখী অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতসমূহে প্রদানের ওপর জোরারোপ করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বাংলাদেশের এলডিসি গ্রাজুয়েশনের সময়ে করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মত বেশকিছু বৈশ্বিক সংকট দেখা দিয়েছে, যার কারণে এ বিষয়ে আমাদের আরো সচেতন থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা বেশি থাকায় আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা আমাদের সক্ষমতা দেখিয়েছি এবং ঔষধ খাত সহ অন্যান্য খাতে এ সক্ষমতা বজায়ে রাখতে পারলে দেশের রপ্তানি উল্লেখজনক হারে বৃদ্ধি পাবে। এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ হতে বেসরকারিখাতকে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সেমিনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)’র সম্মানিত ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ঔষধ খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮৮.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশের ঔষধ ও কেমিক্যাল খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ হলো ৪১৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা মোট বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ১.৯৪ শতাংশ। মোস্তাফিজ বলেন, গত অর্থবছর আমাদের ঔষধ খাত প্রায় ১০৫০.১ মিলিয়ন মার্কিন ডালারের কাঁচামাল আমদানি করছে, এমতাবস্থায় স্থানীয়ভাবে এপিআই উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর আরো মনোযোগী হতে হবে। এছাড়াও গবেষণা ও উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন তিনি।
২০২৬ সালের পর মেধাস্বত্তসহ বেশ কিছু নিয়ম-নতি মানতে গিয়ে শুধু ইনসুলিনের দামই ৮ গুণ বাড়বে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে সামনে আরো ৩ বছর সক্ষমতা বৃদ্ধির সময় আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সর্বশেষ বিশ্ববাণিজ্য সভার বৈঠকে ২০২৬ সালের পরও রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি জানানো হলেও তা গ্রহণ করা হয়নি বলেও জানান তিনি। শুধুমাত্র ভ্যাকসিন তৈরির সুবিধা মিলবে।