- একই সঙ্গে নিহত ৬ জনের জানাজা অনুষ্ঠিত
গাজীপুর থেকে পদ্মা সেতু ও কুয়াকাটা দেখতে গিয়ে লাশ হল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী জয়েরটেক এলাকায় ৬ জন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বরিশালের উজিরপুর এলাকায় মহাসড়কে তাদের বহন করা মাইক্রোবাসের চাকা পানচার হয়ে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৬ জন নিহত হয়। এসময় আহত অবস্থায় আরও কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঘটনায় গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জয়েরটেকে নিহতদের বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে আকাশ-বাতাস।
নিহতরা হলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ১১ নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর গ্রামের ফজিরুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমিন, আব্দুর রহমানের ছেলে হারুনর রশীদ, জয়ের টেক গ্রামের রহমানের ছেলে জালাল হোসেন, হাসান আলীর ছেলে আব্দুস সালাম, জব্বারের ছেলে শহিদুল ইসলাম ও আহাকি এলাকার তমিজ উদ্দিনের ছেলে হাসান।
নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, গাজীপুরের জয়ের টেকের ১০ বন্ধু গত বৃহস্পতিবার ভোরে পদ্মা সেতু ও কুয়াকাটা ভ্রমণে মাইক্রোবাসযোগে রওয়ানা হয়। পদ্মা সেতু দেখে কুয়াকাটা যাওয়ার পথে দুপুর ১২টার দিকে বরিশালের উলিপুর এলাকায় মহাসড়কে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটির চাকা পানচার হয়ে গেলে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। এসময় বিপরীত দিক হতে আসা একটি বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই রুহুল আমিন, হারুনর রশীদ, জালাল হোসেন, আব্দুস সালাম, শহিদুল ইসলাম ও হাসান নিহত হয়। বাকিরা গুরুতর আহত হয়। এদিকে তাদের মুত্যুর খবর গাজীপুরের জয়েরটেকে পৌঁছালে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাড়িতে চলে শোকের মাতম। সরজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নিহতদের বাড়িতে মানুষের ঢল। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ ভিড় করছে নিহতদের বাড়িতে।
নিহত হারুনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্ত্রী শান্তা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলতে থাকে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলে। ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে আমি কি করে বাঁচব। আল্লাহ তুমি আমাকে কেন স্বামী ছাড়া করলে। আমার সন্তানকে কেন এতিম করলে। পাশের ঘরে বুকফাটা আর্তনাত শোনা যাচ্ছে হারুনের মা হাসনা বেগমের। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চায়। ওই যে আমার কলিজার টুকরা। আমার বুকের ধন। তাদের কান্নায় ওই বাড়িতে আসা লোকজনের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
শুধু হারুন নয়। জয়ের টেকে নিহত সবার বাড়িতেই চলছে একই শোকের মাতম। এর আগে এক সঙ্গে এত মৃত্যু ওই গ্রামের আর কখনো দেখেনি গ্রামবাসী। সবাই কেমন যেন স্তব্ধ।
১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবউদল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের গ্রামে এক সঙ্গে এমন মৃত্যু আর কখনো হয়নি। আমরা নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
জানা যায়, নিহত ৬ জনের জানাজা একত্রে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন ১১নং ওয়ার্ডের পূর্ব কৃষ্ণপুর নছের মার্কেট প্রাঙ্গণে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় গাজীপুরের সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে নিহতদের যার যার পারিবারিক কবরে দাফন করা হয়।
ভ্রমণসঙ্গীরা জানান, পদ্মাসেতু ও কুয়াকাটা ভ্রমণের উদ্দেশ্য গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে তারা রওনা হন। দুটি মাইক্রোবাসে মোট ২৩ জন সফরসঙ্গী ছিলেন। নিহতদের গাড়িতে ছিলেন ১০জন। তারমধ্যে ৬ জন মারা গেছেন, চারজন আহত হয়েছেন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।