ঢাকা | বৃহস্পতিবার
৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেতু-সড়কে সুনামির ক্ষত

সেতু-সড়কে সুনামির ক্ষত

সিলেটে দুই দফা বন্যায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখনো বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে সড়ক। যেসব স্থান থেকে বন্যার পানি নেমেছে সেসব স্থানের সড়কগুলো মারাত্মক ক্ষত নিয়ে ভেসে ওঠেছে। কোথাও কোথাও বন্যার পানির তোড়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে পাকা সড়ক। আর কোথাও খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টির হয়েছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে ওইসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন।

সড়ক ও জনপথ (সওজ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও সিটি করপোরেশনের হিসেব মতে, এবারের বন্যায় সিলেটে প্রায় ১৬শ’ কিলোমিটারের বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক সেতু। সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতু সংস্কারে ২১শ কোটি টাকার প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য।

সিলেটে মে মাসে প্রথম দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতে জুন মাসে ফের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলাজুড়ে দেখা দেয়া এই বন্যায় তলিয়ে যায় মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়ক। হাজার হাজার কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সাথে সকল উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি।

ভয়াবহ বন্যার স্রোতে নগর থেকে সীমান্তবর্তী গ্রামীণ জনপদ- সকল এলাকার সড়ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ি ঢল ও বন্যার স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে পাকা সড়ক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পানিতে তলিয়ে যাওয়া অবস্থায় যেসব সড়ক দিয়ে যান চলাচল করেছে সেগুলো। বন্যার পানি নামার সাথে ওইসব সড়ক ভেসে ওঠছে বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দ নিয়ে। পানি নামলেও এসব সড়ক বর্তমানে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সড়কগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

এদিকে, বন্যায় সড়ক ও সেতুতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। তাদের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলায় মিলিয়ে ২ হাজার ৪৩১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সড়ক মেরামত বা সংস্কারে লাগবে ২ হাজার ৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

অপরদিকে, বন্যার কবলে পড়ে সিলেট অঞ্চলে ২ কিলোমিটার ৫৯৬ মিটার সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতে ৭২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। তাই সড়ক ও সেতু সংস্কার বা মেরামতে সবমিলিয়ে প্রয়োজন ২ হাজার ১২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

সিলেট সিটি করপোরশেন (সিসিক) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় মহানগরী এলাকার ১৮৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিসিকের প্রকৌশল শাখার হিসাব মতে- সড়ক ছাড়াও নগরীর ৯৬ দশমিক ৭২ কিলোমিটার ড্রেন, প্রায় এক কিলোমিটার রিটেনিং ওয়াল, ৬০ কিলোমিটার ফুটপাত ও ৮২ কিলোমিটার পানির লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরসিসি রাস্তা ছাড়াও বেশ কিছু এসপল্ট ও সিসি রাস্তায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি জানান, সড়কের একই ক্ষতি পোষাতে ৩২৮ কোটি টাকা প্রয়োজন। বরাদ্দ চেয়ে ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

সওজ সূত্রমতে, এবারের বন্যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ১৭টি রাস্তার ১৬৬ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার সময় এসব রাস্তা তলিয়ে যায়। এখনো কয়েকটি রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারি-গোয়াইনঘাট ও দরবস্ত-কানাইঘাট সড়ক।

সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিয়ানীবাজার উপজেলার কয়েকটি স্থানে এখনো সড়কের উপর পানি রয়েছে। সবমিলিয়ে বন্যায় সওজের আওতাধীন সড়কের ৫৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আপাতত বিভাগীয় মেরামতের মাধ্যমে সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বরাদ্দ না পাওয়া গেলে স্থায়ী মেরামত কাজ শুরু সম্ভব হবে না।

এদিকে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এলজিইডির আওতাভুক্ত গ্রামীণ সড়কগুলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বন্যায় এলজিইডি’র আওতাভূক্ত প্রায় ১২শ’ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবীর জানান, গ্রামীণ সড়কগুলো এলজিইডি’র আওতাধীন হওয়ায় বন্যায় এ বিভাগের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এরপরও বন্যার সময় বিভিন্ন স্থানে বালুর বস্তা ফেলে ঢল আটকানোর চেষ্টা করায় ক্ষতি কিছুটা কমানো গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে ইট ও বালু ফেলে আপাতত যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন