ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লটকনের ৩শ কোটি টাকার বাণিজ্য

লটকনের ৩শ কোটি টাকার বাণিজ্য
  • নরসিংদীর লটকন যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপে

নরসিংদীতে এবার লটকনের প্রায় তিনশ’ কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। বেশী লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলে প্রতিবছর লটকন চাষ বাড়ছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানী হওয়ায় সোনালি ভবিষ্যত গড়ে উঠছে লটকন চাষীদের। যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এখানকার লটকন। এবার অনাবৃষ্টিতে লটকনের ফলন কম হয়েছে। তবে, বাজার দাম বেশি হওয়ায় বাগান মালিকরা লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, উঁচু আর লালমাটির টিলা লটকন চাষের জন্য উপযোগী ভূমি। জেলার সর্বত্র কমবেশি লটকনের ফলন হয়। এ বছর জেলায় ১ হাজার ৬শ ৭৩ হেক্টর জমিতে লটকনের আবাদ হয়েছে। সুস্বাদু লটকন ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে কয়েক গুণ। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই লটকনের চাষ বাড়ছে। বিশেষ করে বেলাব ও শিবপুর উপজেলায় গত ৩০ বছরে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের প্রসার ঘটেছে। দুই উপজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখন লটকন। লটকন চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর পাশাপাশি বেকার সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। শিবপুর ও বেলাবো উপজেলার লাল রঙের উঁচু মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া পলাশ, রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটিও লটকন চাষের উপযোগী। বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি লটকন ৭০ থেকে দুশ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর লটকন আবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক কৃষক। ইতোমধ্যে এসব এলাকার লটকন এখন অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় কয়েকগুণ লাভ বেশি হওয়ায় লটকন চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষকরা। তবে, এ বছর অনাবৃষ্টি আর খরার কারণে লটকনের ফলন কম হয়েছে। তবে বাজার মূল্য গতবছর থেকে বেশি হওয়ায় কৃষক লাভবান হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সূত্রে আরো জানান যায়, নরসিংদীর লটকন খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় কদর বেড়েছে। ২০০৮ সাল থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয় নরসিংদীর লটকন। মৌসুমী এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে জেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল ও শিবপুর উপজেলা সদরে বসছে লটকনের বাজার। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে এসব লটকন রফতানি হচ্ছে বিদেশের বাজারেও। অনেকে সরাসরি জমি থেকে লটকন কিনে সরবরাহ করছেন দেশ-বিদেশের বাজারে।

শিবপুর উপজেলার যোশর গ্রামের বাগান মালিক মশিউর রহমান বলেন, লটকন বিক্রির জন্য তেমন ভাবতে হয়না। প্রতিদিন স্থানীয় বাজার ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সকাল থেকে বাজার জমে। সেখানে স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার এসে লটকন কিনে নিয়ে যায়। শুধু বাজার থেকেই নয় পাইকাররা বাগান থেকেই লটকন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার ফলন কম হলেও বাজার দাম ভালো তাই লাভবান হবো।

শিবপুর উপজেলার চৈতন্যা গ্রামের কৃষক শামিম মিয়া বলেন, বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি লটকন ৭০ থেকে দুশ’ টাকা পযর্ন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফলন কম আসলেও এবার লটকনের দাম বেশি। আমরা প্রতিদিন বাগান ও বাজারে লটকন বিক্রি করছি।

শিবপুর উপজেলার চৈতন্যা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫-১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। এটির চাষে রোগ বালাই তেমন একটা নেই, চাহিদাও প্রচুর। এসব কারণেই দিন দিন আমাদের এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটছে। এছাড়া দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক ড. মো. সাইদুর রহমান বলেন, নরসিংদীর চাষীদের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দেয়া এক সময়কার অপ্রচলিত ফলের নাম লটকন। এবছর জেলায়  ২৫ মেট্রিক টন লটকন উৎপাদনের আশা করছি। যার বাজারমূল্য প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা। ঔষধি গুণসম্পন্ন লটকন চাষ আরো বাড়াতে চাষিদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। জেলার শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলার লাল মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান।  তাই এখানে লটকনের ভালো ফলন হয়। লটকনের বহুমুখী ব্যবহার করা যেতে পারলে লটকন থেকে আরো অর্থ আয় করা যেতে পারতো। সেজন্য কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন