ঢাকা | শুক্রবার
২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নূহাশ পল্লীতে ২০ প্রকাশক

নূহাশ পল্লীতে ২০ প্রকাশক

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে স্থানীয় দুটি মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের নিয়ে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে নূহাশ পল্লীতে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। বেলা ১১টায় হুমায়ুন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও তার দুই ছেলে নিশাত হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূনসহ ভক্ত ও হিমু পরিবহনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের কবরে নূহাশ পল্লীর লিচু তলায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

মেহের আফরোজ শাওন সাংবাদিকেদর জানান, ক্যান্সার হাসপাতাল নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের যে স্বপ্ন ছিল সেটা পূরণ করার জন্য যে শক্তি যে সামর্থ্য দরকার হয় সেটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তাও আমার নেই। সমষ্টিগতভাবে আমরা সবাই যদি চেষ্টা করি হয়তো বা হবে। সে ধৈর্যটা আমার আছে, সে ধৈর্য ধরে আমি ১০ বছর অতিক্রম করেছি। সে স্বপ্নটা আমি দেখেছি, দেখছি। এটা কম সময় না। যাদের সঙ্গে নিয়ে সে স্বপ্নটা পূরণ করা দরকার, আমি চাইলে একটা ছোটখাট হাসপাতাল করতে পারি। সেটা ৮/১০টা হাসপাতাল বাংলাদেশে যে রকম আছে সেটা সে রকম হবে না, সেই জোর আমার নেই।

মেহের আফরোজ শাওন আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদের নিজ গ্রামে ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপিঠটি যেটার কথা আমি প্রতিবারই বলেছি সেটি নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল। এ স্কুলটি ২০২০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (অষ্টম শ্রেণী) পর্যন্ত এমপিওভুক্ত ছিল। কিন্তু সু-খবর হলো ওই স্কুলটি হুমায়ুন আহমেদের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীর মাসেই ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এমপিওভুক্ত হয়েছে। সে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পাশাপশি বিভিন্ন বিষয়ে জেলা পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানের মধ্যে মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এটা আমাদের কাছে অনেক বড় পাওয়া।

হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী আরও বলেন, আমি বিভিন্ন জনকে বলবার চেষ্টা করছি বা সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশের সরকার তথা নীতিনির্ধারকদের প্রতি হুমায়ূন আহমেদ যে ধরনের ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপনের স্বপ্ন দেখছিলেন তা নির্মাণের উদ্যোগ নেবার জন্য অনুরোধ করছি। আমার পক্ষ থেকে যদি এমন হয় হুমায়ূন আহমেদের সম্পদ পরিবারের সবার সম্পদ। তার পরিবারের কেউ পিছ পা হবে না সে স্বপ্ন পূরণের জন্য। এজন্য সরকার যদি উদ্যোগ নেয় পরিবারের পক্ষ থেকে যেভাবে যা করা দরকার হয় তা আমরা করব।

হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন নিয়ে শাওন সাংবাদিকদের বলেন, এটা নির্মাণ আমাদের পক্ষে সম্ভব। এটা হবে। এটা নূহাশ পল্লীতেই হবে। হুমায়ূন আহমেদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সেগুলো খুব সুন্দরভাবে সংগৃহীত আছে। তার হাতে আঁকা ছবিগুলো অনেকদিন ধরে নিউইয়র্কের এক ব্যক্তির কাছে আটকে ছিল। অতি সম্প্রতি সেই ছবিগুলো আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। হুমায়ুন আহমেদের হাতের লেখা স্ক্রিপটগুলো যেগুলো বিভিন্ন প্রকাশকদের কাছে ছিল সেগুলো তারা যাদুঘরে দান করবেন। শিগগিরই যাদুঘর নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারব।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মাজহারুর ইসলাম বলেন, হুমায়ূন আহমেদের পরিবার থেকে ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি তাদের পাশে থাকবে। তিনি দাবি করেন নূহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারি, বে-সরাকরি আথবা পারিরবারিক উদ্যোগে একটি স্মৃতি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা জরুরি প্রয়োজন। এই উদ্যোগটির সঙ্গেও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি পাশে থাকবে।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কেন্দ্রীয় এবং রাজধানী কমিটির কমপক্ষে ২০ জন প্রকাশক তিনটি প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে হুমায়ূন আহমেদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মিলেনিয়াম পাবলিকেশন্সের স্বত্ত্বাধিকারী এস এম লুৎফর রহমান, ধ্রুবপদ প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, মাতৃভাষা প্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী নেছার উদ্দিন আইয়ুব, অনিক পাবলিকেশন্সর স্বত্ত্বাধিকারী মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ।

সংবাদটি শেয়ার করুন