গত বছর ঈদুল আযহার নামাজ মাঠে পড়ে আনন্দের সাথে উদযাপন করেছিল ১২ বছরের শিশু আয়ান। এবার বন্যায় তার অভিজ্ঞতা পুরোটাই পরিবর্তন করে দিয়েছে। জীবনে আশ্রয়কেন্দ্রে কখনো ঈদ উদযাপন করতে হবে তার কল্পনাতেই ছিল না।
ভয়াবহ বন্যায় এখন তার পরিবার অশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। বন্যার কবলে পড়ে এভাবে শত শত পরিবার এখন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তাদের ঈদ এবার আশ্রয়কেন্দ্রে কাটাতে হবে।
৫২ বছর বয়সী অনফর উল্ল্যা জানান, ‘আমার জীবনে কখনো এভাবে বন্যা দেখিনি। আর আশ্রয়কেন্দ্রে কখনো ঈদের সময় কাটেনি’। তিনি আরও বলেন ‘ঈদগাহে নামাজ পড়বো ,হাশি-খুশি ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবো এমনটা হলো না। এবার আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য’। উচুঁ এলাকা থেকে হাওর এলাকায় বিয়ে হয়েছে রাবেয়া বেগমের। বাবার বাড়ি উচুঁ এলাকায় হওয়ায় বন্যার অভিজ্ঞতা নেই তার । কয়েক বছর থেকেই স্বাভাবিকভাবে সন্তানদের নিয়ে ঈন আনন্দ ভাগাভাগি করছিলেন। কিন্তু এবার তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদের সময় কাটাতে হবে।
রাবেয়া বেগম জানান, ‘বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে এবার ঈদ কাটাতে হবে। টাকা-পয়সা এখন আর হতে অবশিষ্ট নেই। এখানে খুবই কষ্টে দিনযাপন করছি’।
পরিবাারের সাথে ৮ বছর বয়সী রুবানা ঘাটের বাজার আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে । রুবানা জানায়, ‘এখানে খুব কষ্টে বাবা-মায়ের সাথে আছি’। ঈদের জমার বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, ‘এখনো বাবা জামা কিনে দেন নি। আমরা বাড়িতে না গেলে আমাদের ঈদ হবে না’। তবে তার বাবা রফিক মিয়া জানান, ‘হাতের টাকা ফুরিয়ে গেছে। তাছাড়া বাড়ি মেরামত করতে হবে । অনেক চিন্তিত আছি’। ১২ বছরের শিশু আয়ান আহমদ জানায়, ‘আমি কখনো আশ্রয়কেন্দ্রে ঈদ করিনি। নানার বাড়ি বেড়াতে যেতে পারবো না’। বন্যার কারনে এভাবেই হাজারো শিশু মানসিক কষ্টে রয়েছে।
এভাবেই এখন আশ্রয়কেন্দ্রে শত শত পরিবার ঈদ উদযাপন করবে। এসব দরিদ্র পরিবারের ঘরে নেই সেমাই,ফিন্নির আয়োজন। শিশুরা তাদের মনের আনন্দে পাড়ায় ঘুরে বেড়ানোর সেই ঈদ এবার আর নেই। বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব আক্রান্ত মানুষ। বন্যায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের সকল গ্রাম। এসব গ্রামে নেই ঈদ আনন্দের ছোয়াঁ। কুরবানি দেওয়ার পরিবেশ নেই এসব বন্যা কবলিত এলাকায়। সবজায়গায় পানি থাকার কারণে এসব এলাকায় পশু কুরবানি করা অসম্ভব হয়ে দাড়িঁয়েছে । গতকাল কুলাউড়া পৌরসভার একটি বিজ্ঞপ্তিতে বন্যা কবলিত এলাকার জনসাধারণের জন্য আলাদা স্থান নির্ধারন করে দেওয়া হয়েছে। বন্যা এলাকার দুর্গত মানুষের আয় বন্ধ হয়েছে বন্যা আসার পরেই। এসব পরিবার এখন ত্রানের দিকে চেয়ে থাকে। বন্যা এলাকায় অনেকে দুর্গত মানুষের জন্য ঈদ উপহার নিয়ে যাচ্ছেন। তবে তা আক্রান্ত মানুষের তুলনায় অনেক কম।
কুলাউড়ায় বন্যার পানি এখনো কমেনি। ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হওয়ায় বন্যার পানি নামছে না। অশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন এখনো অবস্থান করছে। বন্যার দুর্ভোগ মানুষ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি। অনেকে গবাদিপশু বাইরে স্থনান্তর করে বিপাকে পড়েছেন। সংকট রয়েছে গো-খাদ্যের। তাছাড়া বাড়ছে পরিবেশ দূষন। কুলাউড়া শহরের অনেক জায়গায় পানি নেমেছে। তবে অনেক নিচুঁ জায়গায় পানি জমাট বেধেঁ আটকে আছে। এসব আটকা পড়া পানিতে দেখা দিয়েছে দুর্গন্ধ। কুলাউড়া শহরের অনেক জায়গায় ড্রেনে পানি জমাট বেধেঁ রয়েছে। বন্যায় যে সব ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী।
আনন্দবাজার/শহক