দেখতে ভিড় উৎসুক জনতার
ইউটিউবার
- ইউটিউবের আয় থেকে কেনা ষাঁড়টি
- আদর করে নাম রাখা হয় ‘ইউটিউবার’
- ওজন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২০০ কেজিতে
চিরকুমার
- খুশি মনে নাম রাখা হয় ‘চিরকুমার’
- চিরকুমার ছাড়া অসহায় চাষি ইব্রাহিম
- ওজন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩০০ কেজি
সাড়া ফেলেছে ‘ইউটিউবার ও চিরকুমার’ নামে জেলার বড় দুই ষাঁড় গরু। এই ষাঁড় দুটির মালিক ইউটিউবার সুমন মিয়া ও কৃষক ইব্রাহিম মিয়া। শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুমরী ও কুমরী মুদিপাড়া গ্রামের দুই ক্ষুদ্র খামারির ষাঁড়দুটি জেলায় আলোচ্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ওজন আকৃতি ও সৌন্দর্যে ষাঁড়দুটি নজর কাড়ে সকলের। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে তাদের দেখতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা।
জেলা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বাজিতখিলার পশ্চিম কুমরীর এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া একজন ইউটিউবার। ইউটিউবের সুবাদে অভাবের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। আর সে ইউটিউবের আয় থেকে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন একটি ক্ষুদ্র খামার। এখানে তিনটি গরু লালন পালন করছেন তিনি। এ তিনটি গরুর নাম দেয়া হয়েছে ইউটিউবার, সাথী ও গাভী। ইউটিউব থেকে আয় করে কেনা ষাঁড়টির আদর করে নাম রেখেছেন ‘ইউটিউবার’। এরই মধ্যে তার ওজন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২শ কেজি।
একই ইউনিয়নের কুমরী মুদিপাড়া গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম মিয়া শখ করে একটি ষাঁড় গরু লালন-পালন করছেন। অনেক সময় ধরে লালন-পালন করছেন বলেই তার নাম রেখেছেন চিরকুমার। ১৩শ কেজি ওজনের চিরকুমারের দাম হাঁকা হচ্ছে ১০ লাখ টাকা। ৪ বছর আগে ৯৭ হাজার টাকায় কালো-সাদা মিশ্রণের অষ্ট্রেলিয়ান হলষ্টেল ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি কিনেছিলেন তিনি। এই কয়েক বছরে ষাঁড়টির লালন পালন করতে গিয়ে মায়ায় জড়িয়ে পড়েছেন ওই কৃষক। তারপরও এবারের কোরবানির হাটে আদরের চিরকুমারকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
ইউটিউবারের মালিক ও খামারী সুমন মিয়া বলেন, আমি ইউটিউবে কাজ করেই সব কিছু করেছি। ইউটিউবে রোজগার করে প্রথমে এ ইউটিউবারকে কিনেছি। তাই ষাঁড়ের নাম দিয়েছি ইউটিউবার। আমার খামারে ইউটিউবার ছাড়াও আরও তিনটি গরু লালন-পালন করছি। একটার ষাড় গরুর নাম দেয়া হয়েছে সাথী ও আরেকটি গাভী এবং একটি ছোট বাছুর। আমি বড় ষাঁড় গরু ইউটিউবারকে ঘরের বাহিরে বের করিনা। কাজেই আমার খামার থেকে যদি কেউ এই ষাঁড় গরুটি কিনেন তবে সাত লাখ টাকা হলেই বিক্রি করে দেব। আমরা তাকে হাটে তুলতে চাচ্ছি না। আর সাথীকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করবো। গম-ভুট্টার ভুসি, খড় ঘাস ও কলা খাইয়ে ষাঁড়টি পালন করা হয়েছে। প্রতিদিন ষাঁড়টি ৬শ টাকার খাবার খায়। তিনবেলা গোসল করাতে হয়। গোয়ালঘরে একটি ফ্যান দিয়ে ষাঁড়টিকে গরম থেকে রক্ষা করা হয়। মোটা-তাজা করার জন্য কোন ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার দিয়েই বাড়িতে রেখেই ষাঁড়টিকে বড় করে তোলা হয়েছে।
চিরকুমারের মালিক কৃষক ইব্রাহিম বলেন, চার বছরে ষাঁড়টির প্রতি আমার মায়া পড়ে গেছে। ‘চিরকুমার’ আমাকে দেখলে খুশী হয়। আমিও চিরকুমারকে ছাড়া থাকতে পারি না। বিক্রি করতে মন চায় না। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন এ জাতের গরু সাড়ে চার বছর পার হলে বেশ ঝুঁকি থাকে। কারণ এর ওজন প্রায় ১৩শ কেজি। মোটা বেশি হলে মানুষের মতো গরুর নানা সমস্যা হয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবারের কোরবানির ঈদেই বিক্রি করবো চিরকুমারকে। গতবছরও চিরকুমারকে হাটে তুলেছিলাম তখন ভালো দাম না পাওয়ায় বেচতে পারিনি। তখন ওজন ছিলো ৮শ কেজি । চিরকুমারকে গম-ভুট্টার ভুসি, খড় ও ঘাস খাইয়ে পালন করা হয়েছে। প্রতিদিন ষাঁড়টির ৫শ টাকার খাবার লাগে। তিনবেলা গোসল করানো হয়।
মোটা-তাজা করার জন্য চিরকুমারকে কোনো ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে বাড়িতে রেখেই ষাঁড়টিকে বড় করে তোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ষাঁড়টিকে ঘড় থেকে বের করা হয়নি। চিরকুমারের জন্য ১০ লাখ টাকা দাম চেয়েছি। বাকিটা নির্ভর করছে ক্রেতাদের ওপর। এখন পর্যন্ত গরুর পাইকার ও অনেক ক্রেতা ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম দিতে চেয়েছেন ষাঁড়টির।
দুই খামারি জানান, নিত্যপণ্য ও গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব কোরবানির বাজারে পড়েছে। তবে গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারীদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এখন যদি ভালো বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকে তাহলে খামারীরা লোকসান গুণবেন। তাই গতবারের তুলনায় একেকটি গরুর দাম ৫- ৬ হাজার টাকা করে বেড়েছে। তবে খরচ অনুযায়ী ষাঁড়ের দাম বেশি না।
শেরপুর জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শেরপুরের খামারিয়া প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে ষাঁড়গুলোকে বড় করেছেন। এষাঁড়গুলো অনেক মোটা। এ ধরনের ষাঁড় সাড়ে চার বছর হলে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। কারণ মানুষ মোটা হলে যেমন উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যা হয়, একই ভাবে গরু বেশি মোটা হলেও বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। তিনি আরও জানান, এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ৫৫ হাজার ৪৬৫টি। বিপরীতে জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা রয়েছে ৮৪ হাজার ৪১৭টি। এবার জেলায় সব মিলিয়ে প্রায় ৫শ কোটি টাকার পশু বেচা-কেনা হবে বলে ধারণা করছি আমরা। এতে খামারীরা বেশ লাভবান হবেন।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, আমরা চেষ্টা করছি মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাটে আসে। আর হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা রেখেছি। এছাড়া জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ২৭টি কোরবানির হাট ও ৬টি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উদ্যোগে পুরো জেলায় ২৩টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে। সুতরাং ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যেই তাদের কোরবানির পশু কিনতে পারবেন।