ঢাকা | শুক্রবার
৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোরবানির বাজেটে কাটছাঁট

কোরবানির বাজেটে কাটছাঁট

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে পশুহাট। প্রত্যেক হাটে ব্যাপক পশুর আমদানি হচ্ছে। ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যে পছন্দের গরু কিনছেন। বিক্রেতারাও কাছাকাছি দাম হলেই ছাড়ছেন। তবে বড় গরুর চেয়ে ছোট আর মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। ক্রেতারা বলছেন, এবার অর্থনৈতিক চাপের কারণে কোরবানির পশু কেনার ক্ষেত্রে বাজেটে কাটছাঁট করা হয়েছে। পশু কিনতে যতটা সাশ্রয় করা যায় ততই ভালো হয়। একই চিত্র দেখা গেছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও।

গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর বিবিরহাট পশুর হাটে বিকেল গড়াতে মানুষের ভিড় দেখা যায়। দেখাদেখি ও দর কষাকষির পর বেচাকেনায় ফিরছে ক্রেতা-বিক্রেতারা। বিবিরহাট বাজার ইজারাদার সৈয়দ মাহমুদুল হক বলেন, বিকেল থেকে কিছুটা গরু বেচাকেনা হয়েছে। আশা করছি, শুক্র ও শনিবার ভালো বেচাকেনা হবে। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর হাট এখন পথে-ঘাটে ও ঘরে ঘরে হয়ে গেছে। বিবিরহাট বাজার হলেও আশপাশে অলি-গলিতেও কোরবানির পশুর হাট বসে গেছে। প্রতিবছর কোরবানি উপলক্ষে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু আনেন।

সৌখিন ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারের চেয়ে পাড়া-মহল্লা ও ঘাটে ঘাটে গরু রাখেন। সেখানেই চলে বেচাকেনা। চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ জেলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে কোরবানি উপলক্ষে গরুর ব্যবসায় নামে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। বেশির ভাগ খাইনে নতুনত্ব এনেছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। খাইনে সামনে এগ্রো খামারের নামে ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।

বিবিরহাট বাজারে কথা হয় কুমিল্লার চান্দিনা থেকে আসা গরু বেপারি শহীদের সঙ্গে। গত সোমবার বড় আকারের ১৮টি গরু এনেছেন বিবিরহাট বাজারে। তিনি বলেন, দেশিজাতের গরুগুলো নিজের খামারে লালন-পালন করেছি কোরবানির জন্য। এখন ক্রেতারা প্রতিটি গরুর মূল্য ২০-৩০ হাজার টাকার কম বলছে। লোকসানি দামে কীভাবে বিক্রি করব।

সাগরিকা বাজারের সাবেক ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ বাবুল বলেন, করোনার কারণে দু-তিন বছর ধরে লোকসান দিয়েছি। এবার ইজারায় অংশ নিলেও ইজারা পাইনি। সাগরিকা ও বিবিরহাট বাজারের ইজারাদারদের অভিযোগ, গরুবাহী ট্রাক বাজারে আসার আগে রাস্তা থেকে টানাটানি হয়। বিভিন্ন খাইন ও জায়গা দখলদাররা নিজেদের খাইনে গরু নিয়ে যাচ্ছে।

বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, এখনো গরুবাহী ট্রাক ঢুকছে। ব্যবসায়ী ও বেপারীরা ব্যস্ত রয়েছেন গরু নামানো ও পরিচর্যায়। বাজারে দেশীয় গরুর আধিক্য বেশি। পথে রয়েছে কয়েকশ ট্রাক। উত্তরভঙ্গ থেকে গরু বহনকারী ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অনেক বেপারি চট্টগ্রামের চেয়ে ঢাকামুখী হয়েছেন। সাগরিকা বাজারের প্রচুর গরু রয়েছে। আরও অন্তত ৫০-৬০ ট্রাক পশুবাহী ট্রাক পথে রয়েছে বলে জানান ইজারাদার। আজ রাত বা কালকের মধ্যে এসব ট্রাক বাজারে চলে আসবে।

বিবিরহাটে গরু বেপারী মো. শাহজাহান বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেপারিরা গরু নিয়ে বাজারে আসছেন। দূর-দূরান্ত থেকে কয়েক দিন আগে এসে খাইন ধরতে হয়। তাই আগে-ভাগে চলে আসতে হয়।’ স্থায়ী দুটি গরুর বাজার ছাড়াও অস্থায়ী বাজারগুলোতে বেচাকেনা শুরু হয়েছে।

ব্যবসায়ী মো. শরিফ জানান, সাগরিকা বাজারে ৩০টি গরু এনেছেন। সবকটি গরুই বড় আকারের। সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। করোনা মহামারীর দুঃসময় কাটিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন ভালো। তাই বড় গরু বিক্রির আশা করছি। তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত ১৫টি গরু বিক্রি করেছি।

ব্যবসায়ী ও ইজারাদাররা বলেন, চট্টগ্রামে মূলত বেচাকেনা জমজমাট হয় কোরবানের কয়েক দিন আগে। শহরে কোরবানিদাতারা দু-একদিন আগে কিনেন। কারণ অধিকাংশ মানুষের গরু রাখার জায়গা নেই। তবে যাদের গরু রাখার জায়গা আছে তারা এখন থেকেই কেনা শুরু করেছেন।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে এবার সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পশুর হাট বসেছে ছয়টি। হাটগুলো হচ্ছে- সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট, কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার এবং পতেঙ্গায় বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন