- চলনবিল এলাকায় মাছ ধরার উপকরণ তৈরি
- গুরুদাসপুরে সপ্তাহে বিক্রি ৫০ লাখ টাকা
নাটোরের গুরুদাসপুরে চাঁচকৈড় মোকামে জমে উঠেছে মাছ ধরার চাঁই, খোলসুন, বিত্তি, ভারই, ধুন্দি, খাদন ও খালই এর হাট। প্রতি বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয় এসব উপকরণ। পৌর শহরের বাণিজ্য নগরী চাঁচকৈড় হাটে সপ্তাহের দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার এ সব মাছ ধরার সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা।
গুরুদাসপুর উপজেলা ছাড়াও আশপাশের বড়াইগ্রাম, সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও পাবনার চাটমোহর থেকে মাছ ধরার এসব উপকরণ বিক্রি করতে আসেন অনেকে। চলনবিল এলাকা ছাড়াও ঢাকা, মানিকগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট এলাকার পাইকার ও জেলেরা গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় মোকামে এগুলো কিনে নিয়ে যান পাইকারী দরে।
জানা যায়, চলনবিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ ধরার কাজে ব্যবহার হয় চাঁইসহ মাছ ধরার এসব উপকরণ। আর এগুলো বুঁনে বিকল্প আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন কারিগররা।
মাছ ধরার এসব উপকরণ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সবাই দিনমজুর শ্রেণির। জমিজমা নেই বললেই চলে। বর্ষা মৌসুমে তাদের হাতে কাজ থাকে না। তাই বিকল্প আয় হিসেবে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরির আয় দিয়ে চলে তাদের সংসার। চলে ছেলে মেয়েদের শিক্ষার ব্যয়ও। এছাড়া এ কাজে পুঁজিও কম লাগে বলেও তারা জানান।
গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, চাঁই বানাতে বাঁশ আর তালগাছের ডাগুরের শাঁস ও নাইলন সুতা লাগে। দিনে কমপক্ষে চার-পাঁচটি মাছ ধরার চাঁই তৈরি করতে পারেন তিনি। তবে সংসারে যাঁদের সদস্য বেশি, তাঁরা ১০ থেকে ১৫টি চাঁই তৈরি করতে পারেন। প্রতি জোড়া চাঁই তৈরিতে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ হয়। বিক্রি করেন থেকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। খরচ বাদে যা লাভ হয় তা দিয়েই কোনো রকমে চলে সংসার।
গত মঙ্গলবার গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, এক জোড়া চাঁই (খোলসুন) আকার ভেদে ৪৫০ থেকে ৫০০, বিত্তি ৩৫০, ভারই ৩০০, ধুন্দি ২৫০, বানা ৪০০, খাদন ৪৫০ ও খালই ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ থেকে চাঁচকৈড় হাটে আসা পাইকার রেজা বেপারী বলেন, প্রতি হাটে তিনি প্রায় লক্ষাধিক টাকার চাঁই, বানাসহ মাছ ধরার সামগ্রী কিনে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এতে তাঁর খরচ বাদে প্রতি হাটে ৩০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।
সিলেটের পাইকার রুবেল সরকার বলেন, চাঁচকৈড় মোকামের মাছ ধরার উপকরণ গুলো ভালো। তাই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এই মোকাম থেকে প্রতি হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার মাছ ধরার উপকরণ কিনে সেগুলো সিলেটসহ পাশের জেলাগুলোতে বিক্রি করেন তিনি।
গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় চাঁই হাটের ইজারাদার মুক্তার হোসেন বলেন, বর্তমানে এই হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বেশি মাছ ধরার সামগ্রী বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যান। শুধু গুরুদাসপুরেই প্রায় ১২ হাজারের অধিক লোক এসব মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।