বাবারে আমার চারটা ঘরসহ ঘরের সকল মালামাল পানির নিচে দেখতে দেখতে তলিয়ে গেছে, কোন কিছুই রাখতে পারি নাই। কোন রকমে জীবন নিয়ে বেঁচে আছি, পড়নের এই কাপড়গুলা ছাড়া আমার আর কোন কিছুই নাই। এখন বউ-বাচ্চা নিয়া কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো, একমাত্র আল্লাই ভালো জানে।” কান্না জড়িত কন্ঠে নদীর পাড়ে বসে এই কথাগুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী চিত্রি কান্দা পাড়ার নদী ভাঙনে সবকিছু হারানো ৭৫ বছরের বৃদ্ধ খোরশেদ আলম।
নবীনগর উপজেলার মেঘনা তীরবর্তী গ্রামগুলোতে আবারও ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুরে নবীনগর উপজেলার পশ্চিম ইউনিয়নের চিত্রী গ্রামের কান্দাপাড়া ও দড়ি লাপাং গ্রামে চোখের পলকে ৩০ টি বাড়িঘর ও ঘরের ভেতর থাকা ধান, চাউল, আসবাবপত্র, বাড়ির গাছ-পালা, ফসলী জমি, বিদ্যুতের কয়েকটি খুটিসহ কয়েক কোটি টাকার মালামাল মেঘনার নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।
অনেকে এক কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে কোন রকমে জীবন বাঁচিয়েছেন। সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনার করাল গ্রাসে ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে চিত্রি গ্রামের কান্দা পাড়ার খোরশেদ মিয়া, খায়েস মিয়া, হাছু মিয়া, শাহ আলম মিয়া, জালাল মিয়া, আবেদ মিয়া, বেদন মিয়া, আবু সালাম, মাহফুজ মিয়া, অলেক মিয়া, ওমর আলী, রুপ মিয়া, গোলাপ মিয়া, আমির হোসেন, বিল্লাল মিয়া, সুবুর খান, হান্নান মিয়া, সোরাফ মিয়ার পরিবারগুলো, বাড়িঘর হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে অনেকে।
নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় চরম আতংক বিরাজ করছে ওই এলাকার জনবসতিদের মাঝে। বাড়িঘর ছেড়ে অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে পরিবার পরিজন নিয়ে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙনরোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে নবীনগর উপজেলার মানচিত্র পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার একরামুল ছিদ্দিক বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা আমরা পরিদর্শন করেছি। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার ও আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। যাদের বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তাদেরকে আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, ভাঙনরোধকল্পে এমপি মহোদয় একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন, খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে আমরা আশা করছি।