করোনার ধকল কাটিয়ে উঠলেও কলম্বো ক্রাইসিস, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বাড়লেও প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের কাছাকাছি হওয়ার আশা থাকলেও প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি ৫.১ শতাংশ।
সূত্রমতে, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের মাধ্যমে পরিচালিত বৈশ্বিক বাণিজ্য থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে ৫৯ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। অবশ্য আগের অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আদায় করেছিল ৫১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।
সূত্রমতে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেকর্ড সংখ্যক কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৩২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৮ একক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। পাশাপাশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ১১ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ১৬০ টন, আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি।
এর আগের অর্থবছরে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৩ টিইইউএস (২০ ফুটের একক) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.১ শতাংশ। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ১৬০ টন। আগের বছর যা ছিল ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৭৩ টন। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে বন্দরের প্রবৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশ।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুকের দেয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে গত অর্থবছরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৪ হাজার ২৩১টি। আগের অর্থবছরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৪ হাজার ৬২টি। জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি ৪.২ শতাংশ।
নানা প্রতিকূলতার মাঝেও চট্টগ্রাম বন্দরের এই প্রবৃদ্ধি অর্জনকে বন্দরের নেতৃত্বের দক্ষতা হিসেবে দেখছেন ব্যবহারকারীরা। তারা বলেছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নীরব ঘাতকের মতো কাজ করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য কমে যাওয়ায় কমে গেছে কনটেইনারে পরিমাণ। বন্দর কর্তৃপক্ষ চীন হংকং কোরিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ পরিচালনার ব্যবস্থা করে বৈশ্বিক বাণিজ্যে গতিশীলতা আনার চেষ্টা করছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বহুমুখী উদ্যোগ না থাকলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ আরো কমে যেতো বলে মন্তব্য করে ব্যবহারকারীরা বলেছেন, পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে আমদানি রপ্তানি আরও বৃদ্ধি পেতো। এতে কনটেইনার হ্যান্ডলিংও বাড়তো। দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাবের কারণে কনটেইনার হ্যান্ডলিং তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, বর্তমানে কলম্বো ক্রাইসিস কিংবা ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব থেকে দেশের বৈশ্বিক বাণিজ্যকে রক্ষা করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং এবং চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত বৈশ্বিক বাণিজ্য থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কম। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। অবশ্য আগের অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস রাজস্ব আদায় করেছিল ৫১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের জের ধরে বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং শ্রীলংকা ক্রাইসিস চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে। ডলারের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি আমদানি বাণিজ্যে বেশ সংকটের সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে যার প্রভাব পড়েছে বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, প্রবৃদ্ধি ঠিকই আছে। ফিন্যান্সিয়াল ইয়ারে ক্যালেন্ডার ইয়ারের চেয়ে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হয়। তবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ সার্বিক পরিস্থিতির কারণে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং প্রাইমমুভার ধর্মঘটের কারণেও আমাদের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কিছুটা কম হয়েছে। এ দুটি ঘটনা না ঘটলে আরও কমপক্ষে ২০ হাজার টিইইইউএস কনটেইনার বাড়তি হ্যান্ডলিং করা যেত, যা আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়াত।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান আরো বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের জন্য বেশ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তবে ওই রুট অ্যাভয়েড করতে আমরা ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চালু করেছি। সাময়িকভাবে দেখা দেয়া ওই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।
আনন্দবাজার/শহক