আশুলিয়া শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও মনববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহন করে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুছ আলী কলেজের সামনে এই কর্মসুচি পালন করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারী জিতুকে গ্রেফতার করার দাবী জানান। এছাড়াও তারা ছয় দফা দাবী আদায় না হলে আরো কঠোর কর্মসুচীর হুশিয়ারী করেন।
গত শনিবার স্কুলের মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় স্ট্যাম্প দিয়ে উৎপল কুমার নামের এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করে ওই স্কুলের দশম শ্রেণীর এক ছাত্র। এই ঘটনার তিনদিন পার হয়ে গেলেও হত্যাকারী জিতুকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। এরই প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বেলা ১১টায় থেকে এই কর্মসুচি পালন শুরু করে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি জানান, তাদের দাবিগুলো হচ্ছে, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারী জিতুকে গ্রেফতার করতে হবে, জিতুর সাথে অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতার করতে হবে, জিতুর পরিবার ও তার প্রভাবশালী বাবাসহ পরিবারের অনান্য সদস্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, নিহতের পরিবারের আর্থিক যতো ক্ষতি আছে তা হত্যাকারী পরিবারকে বহন করতে হবে, আমাদের কলেজের সাধারন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন বেদাবেদ চলবে না এ নিয়ে কঠোর আইন ও তা বাস্তবায়ন হতে হবে, আমাদের এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং কিশোর অপরধা মুছে দেওয়ার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের তাদের সাথে অংশগ্রহন করার দাবী জানান।
এসময় শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, এই এলাকার অনান্য স্কুল ও শিক্ষকদের একত্রিত করা হবে। আশুলিয়ার প্রতিটি স্কুল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অংশ গ্রহন করানো হবে। এটি শিক্ষকদের আন্দোলন তবে আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের দায়বদ্ধতা থেকে এই আন্দোলন শুরু করেছেন। সে কারনেই সব শিক্ষকদের আন্দোলনে অংশ গ্রহন করার আহ্বান জানানো হয় এই কর্মসুচি থেকে।
মানববন্ধনে এসময় স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুন্নি আক্তার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সকল শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ থাকার কথা। তবে বাস্তবে তা কখনোই দেখা যায় না। এলাকার স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের শিক্ষার্থীদের সাথে ও দেশের অনান্য অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে বেদাভেদ রয়েছে। স্থানী শিক্ষার্থীদের যে সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। অনান্য অঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সেই সকল সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এই বেদাভেদ দুর করার দাবীও জানান তিনি। এছাড়াও শিক্ষক নিহতের ঘটনায় তার পরিবারের যে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে তা হত্যাকারীদের পরিবারের পক্ষ থেকে বহন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
এসময় ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ঘরে বসে টিভিতে ও লাইভে বড়ো বড়ো কথা বলে। অথচ কেউ এখন পর্যন্ত তাদের কাছে গিয়ে সান্তনা পর্যন্ত দেয়নি। তারা ঘরে বসে বড়ো বড়ো কথা না বলে তাদের পাশে গিয়ে কর্মসুচিতে অংশগ্রহন করার দাবী জানান।
মাননবন্ধন শেষে শিক্ষার্থী স্থানীয় সড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসময় তাদের সাথে আশপাশের আরো অনান্য স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও অংশ গ্রহন করেন।
আশুলিয়া থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামান বলেন, শিক্ষক হত্যার ঘটনার পর থেকেই ওই ছাত্র আত্নগোপনে রয়েছেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য আশুলিয়া থানা পুলিশের কয়েকটি দল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।