- প্রশাসনের অভিযানে ১০ দিনে ৪ জনের কারাদণ্ড
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন। গত ১০ দিনের ব্যবধানে তারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তিনটি বাল্যবিয়ে পণ্ড করে দিয়েছে। এসব বিয়ের আয়োজনে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শরণখোলা উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট নূর ই আলম সিদ্দিকী ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব দণ্ডাদেশ দিয়েছেন।
২৫ জুন উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামে বগী সুন্দরবন দাখিল মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থী লামিয়া আক্তার রিম এর বয়স বাড়িয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঐ বাড়িতে হানা দিয়ে বিয়ে পন্ড করে দেয়। এসময় বিয়ের বর পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার জিহাদুল ইসলামের পুত্র জুবায়ের (২০), বরের চাচা নুরুজ্জামান ফকির (৩০) ও বরের মামা শরণখোলা উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাদল তালুকদার (৫০) কে আটক করে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এসময় কনের পিতা রফিকুল ইসলাম পালিয়ে যায়।
এর আগে ২৩ জুন উপজেলার রাজৈর গ্রামের আবুল হোসেন ডাবলু তার মেয়ে তুরফা আক্তারের (১৩) বিয়ের আয়োজন করা হয় । সে উপজেলা সদরের আরকেডিএস বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ ইকরাম হোসেন কে নির্দেশ দিলে তিনি ঐ বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে নিবৃত্ত করেন। এসময় তুরফা আক্তারের মা তার মেয়ে কে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দিবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়েছেন।
এর আগে সোমবার রাতে খুলনার কয়রা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামের দিনমজুর আবুল বারিক মিয়া তার মেয়ে তানিয়া
আকতার (১৬) কে বিয়ে দেয়ার জন্য শরণখোলা নিয়ে আসেন। তার এক আত্মীয়ের মধ্যাস্থতায় শরণখোলা উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের হারুন মিয়ার পুত্র বাদল মিয়ার সাথে তার বিয়ের আয়োজন করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী ঐ বাড়িতে গিয়ে বিয়ে পন্ড করে দেয়। এ সময় মেয়ের পিতা আবুল বারিক মিয়াকে(৫০) ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠায়।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে,করোনা পরিস্থিতির কারনে স্কুল মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুল বিমুখ হয়ে পড়ে। সেই সময় দরিদ্র পরিবারের অভিভাবকরা তাদের স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া সন্তানদের বোঝা মনে করে সহজে বিয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পড়াশুনার চাপ না থাকায় অলস সময়ে শিক্ষার্থীরা পারস্পরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ বন্ধ থাকায় মোবাইল ফোনে এ্যাসাইনমেন্ট করাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে যায়। ইন্টারনেট সংযোগের সহজলভ্যতার কারনে অনেক শিক্ষার্থী ফেসবুক ও মেসেঞ্জার ব্যবহার করে নানা রকম সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এসব সম্পর্কের প্রেক্ষিতে করোনাকালীন ও তার পরবর্তী সময় এ উপজেলায় বাল্য বিয়ের হিড়িক পড়ে যায়। সে সময় বিভিন্ন পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় শরণখোলা উপজেলা আলোচনার শিরোনামে উঠে আসে। সরকারের কঠোর নির্দেশে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এ সময় প্রশাসনিক ভাবে বেশ কিছু বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে অভিভাবকদের জরিমানা আদায় করে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হলে ও বাল্য বিবাহের প্রবনতা রোধ করা যায়নি।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী শরণখোলা উপজেলায় যোগদানের পর বাল্য বিবাহ রোধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করেছেন। গত ১০ দিনের ব্যবধানে শরণখোলা থানা পুলিশের সহায়তায় ৩ টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে ৪ জন কে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে তার এই কঠোর মনোভাব এর বার্তা উপজেলার সর্বত্র ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করা হয়েছে। এটা দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী ও সমাজের জন্য কতটা ভয়াবহ
তা বোঝানোর জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি জন সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বাল্য বিবাহের প্রবনতা কমিয়ে শরণখোলা উপজেলা কে বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে সমাজের সকল শ্রেনীর মানুষের সহায়তা কামনা করেন।