ঢাকা | রবিবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেতুতে পারাপারে কড়াকড়ি

সেতুতে পারাপারে কড়াকড়ি

সেনাবাহিনীর টহল, গাড়ি থেকে নামা যাবে না

পদ্মা সেতু পারাপারের সময় নির্ধারিত বিধি নিষেধ পালন নিশ্চিত করতে কড়াকড়ি হয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। পদ্মা সেতুতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী সদস্যরা নজর রাখছেন।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ। একই সাথে পায়ে হেঁটেও পারাপার বন্ধ। সেতুতে গাড়ি থামিয়ে আড্ডা-গল্প পুরোপুরি বন্ধ। সেতুর ওপরে গাড়ি চালাতে হবে পূর্বের বেঁধে দেওয়া গতিতে। কেউ যেন অনিয়ম না করে সে জন্য নিয়মিত টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।

উদ্বোধনের পরদিন গত রবিবার সেতুর ওপর চিত্র যেমন ছিল, গতকাল সোমবার সেই চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক) প্রকাশিত হওয়া ভিডিওতে সেতুর ওপর রাস্তার পাশে মানুষকে আড্ডা গল্প ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তবে গতকাল সোমবার সেটা ছিল অচেনা। বলতে গেলে খালি ছিল সেতুর ওপরের রাস্তা। কেউ যাতে গাড়ি থেকে সেতুতে না নামে ও ছবি না তোলে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

ফলে সোমবার সেতুর ওপর গাড়ি থামিয়ে মানুষজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি। কোন ধরনের আড্ডাও দেখা যায়নি। কোথাও কেউ থামলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সরিয়ে দিচ্ছে। এদিন পুরো সেতুজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় পদচারনা ছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মা সেতুর পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে সেতুতে মানুষের হাঁটা বন্ধ করা রাখা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সেতুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি কড়া করেছে। পারাপারের সময় পদ্মা সেতুতে না নামার জন্য টোল প্লাজা এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করার পর জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা টোল প্লাজায় শৃঙ্খলা ফিরেছে। একই সাথে মাওয়ার টোল প্লাজায় ফিরেছে শৃঙ্খলা।

গতকাল সোমবার সকাল থেকে নাওডোবা প্রান্তে কোনো যানবাহনের জট নেই। মাওয়ার প্রান্তেও একই অবস্থায় দেখা যায়। এখানেও ছিল না যানবাহনের জটলা। ব্যক্তিগত গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি টোল দিয়েই বাধাহীনভাবে সেতু পার হতে পারছে। সেতুর দুই প্রান্তের মোটরসাইকেল পার হচ্ছে ফেরিতে। সেতু দিয়ে পার হতে না পেরে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ফেরির জন্য মোটরসাইকেল চালকদের অপেক্ষা। একই অপেক্ষা নাওডোবা ঘাটে।

বাইক চলাচল বন্ধ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, গত রবিবার মোটরসাইকেল আরোহীদের কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এতে দুটি প্রাণ ঝরে। বাধ্য হয়ে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেতু সংশ্লিষ্ট সব মহল মিলে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে যানবাহনের জট নেই। ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে। তবে সকালে পদ্মা সেতু পার হতে না দেওয়ায় অনেক বাইকচালক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজধানীর উত্তরা থেকে আসা আবিদ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুর সামনে বেলা ১১টায় আসি। কিন্তু সেতুতে আমার বাইক ওঠতে দেয়নি। পরে ফেরিঘাটে যাই। সেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ফেরি দিয়ে পার হয়ে আসি।

সেতুতে ওঠতে না পেরে ক্ষোভ নিয়ে বাসায় ফিরেন বাইক চালক নোমান। তিনি বলেন, থাকি ওয়ারিতে। মাদারিপুরে এক অসুস্থ স্বজনকে দেখতে যাওয়ার কথা। সময়ও বেশি নেই। এই সময়ের মধ্যে ভেবেছি সেতু যেহেতু অসুস্থ স্বজনকে দেখে তাড়াতাড়িই চলে আসা যাবে। কিন্তু সেতুতে ওঠতে দেয়নি। সেখানের দায়িত্বরত কর্মীরা ফেরিতে পারাপার হতে বলে। ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখি র্দীঘ লাইন। পরে ঢাকায় চলে আসি।

গত শনিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর। যার মধ্য দিয়ে জনগণের অবসান হলো দীর্ঘ প্রতীক্ষার। পরদিন ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়। এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি কারণে দুটি প্রাণ ঝরে যায়, পরে ওইদিন রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন