ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণাঞ্চলে চ্যালেঞ্জে লঞ্চব্যবসা

দক্ষিণাঞ্চলে চ্যালেঞ্জে লঞ্চব্যবসা

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার খুলবে আর মাত্র ১ দিন পর। এ সেতু জীবনযাত্রা, অর্থনীতি আর সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। এ পরিবর্তনের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের লঞ্চ ব্যবসা। ব্যবসায়ীরা স্বীকার না করলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নতুন নতুন ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করছেন নৌযানগুলোয়। যার কারণে লঞ্চ কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। যাত্রী ধরে রাখার এ প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিয়ে তৈরি হচ্ছে আধুনিক নৌযান।

এ লঞ্চগুলো নির্মিত হচ্ছে বরিশালের ডকইয়ার্ডেই। সর্বোচ্চ সেবার মাধ্যমে যাত্রী ধরে রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন নৌযান মালিকরা। তাই তো কীর্তনখোলা নদীতীরে দেশীয় প্রযুক্তিতে চলছে সুন্দরবন-১৫ ও ১৬ লঞ্চের নির্মাণকাজ। ৩০০ ফুট লম্বা এবং ৫২ ফুট চওড়া লঞ্চটিতে বিভিন্ন ধরনের কেবিন ছাড়াও যাত্রীসেবায় অনেক কিছুই সংযোজন করা হবে। আসন্ন কোরবানির ঈদে সুন্দরবন-১৬ লঞ্চটি যাত্রী বহনে যুক্ত হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। শুধু তা-ই নয়, এ বহরে নতুন করে নামছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম খানের দুটি নতুন লঞ্চ। সে দুটির কাজও খুব জোরেশোরে চলছে। সম্প্রতি সুরভী-৭ লঞ্চেও নতুন ডেকোরেশনে লিফট লাগানো হয়েছে। কেবিন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আনা হচ্ছে আধুনিকতা। একইভাবে প্রায় প্রতিটি কোম্পানির লঞ্চে চলন্ত সিঁড়ি, এটিএম বুথ, হেলিপ্যাড, সুইমিং পুল, লিফট, আইসিইউ, ডাইনিং, শিশুদের খেলার জোন, রেস্টুরেন্ট, ব্রেস্টফিডিং রুম এবং ইন্টারনেটসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে লঞ্চমালিকদের।

লঞ্চ পরিচালনায়ও আনা হয়েছে ডিজিটাল যন্ত্র। নির্মাণাধীন লঞ্চগুলোয় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে বলে জানান সুরভী লঞ্চের মালিক রেজিন উল কবির। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে একটি প্রভাব পড়বে নৌ সেক্টরে। যদিও অনেক লঞ্চমালিকের দাবি, লঞ্চযাত্রীরা আলাদা। যারা লঞ্চে যাত্রা করার তারা লঞ্চেই যাত্রা করবে। সড়ক যোগাযোগের তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। তবে অনেকে প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন। সব দিক বিবেচনায় লঞ্চগুলো অত্যাধুনিক করতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। শুধু তা-ই নয়, যাত্রীদের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে সেবার মান বাড়ানো হচ্ছে। এমনকি রাত ১০টার পর যেন লঞ্চগুলো ছাড়া যায় সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।

বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মানওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, শুধু আধুনিকতার প্রতিযোগিতা না করে সেবার মান বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি ভাড়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বরিশালের যাত্রীবাহী বাস পরিবহনের চালক-মালিকরা বলছেন, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে ১ দিন পর। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলা থেকে ঢাকায় যেতে সময় কমে যাবে প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। আর যাত্রীসেবার মানও বাড়বে কয়েক গুণ।

বাংলাদেশ নৌপরিবহন (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সবার আগে যাত্রীসেবার কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করছি। সারা বছর যাতে নির্বিঘ্নে লঞ্চ চলাচল করতে পারে সে বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। যেন নাব্য সংকটের কারণে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত না হয়। পাশাপাশি নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে রাডারসহ নানা অত্যাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার করছি আমরা। পদ্মা সেতু হলেও বরিশালের আরামপ্রিয় মানুষ নৌযানে যাত্রা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা দক্ষিণাঞ্চলবাসী কৃতজ্ঞ।

বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, এখন প্রতিযোগিতার সময়। পদ্মা সেতু হলে এখানে অত্যাধুনিক বাস আসবে। মাত্র সাড়ে ৩-৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ হবে। সেক্ষেত্রে নৌ সেক্টর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই যাত্রীদের ধরে রাখতে তাদের নতুন নতুন প্যাকেজ দিতে হবে। লঞ্চমালিকদের নতুন করে ভাবতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন।

এ ব্যাপারে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, লঞ্চ ব্যবসায়ীরা একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে তারা তাদের মানোন্নয়ন ঘটালে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করেন বিভাগীয় কমিশনার।

সংবাদটি শেয়ার করুন