ঢাকা | শনিবার
১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতি রোধে দরকার আলাদা কর্তৃপক্ষ: দাবি ব্যবসায়ীদের

দুর্নীতি রোধে দরকার আলাদা কর্তৃপক্ষ: দাবি ব্যবসায়ীদের

সরকারি ব্যয় সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা দেখা তথা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দুর্নীতি দূর করতে আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করার দাবি এসেছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। অর্থমন্ত্রী ঘোষিত বাজেট নিয়ে গতকাল রবিবার এক ওয়েবিনারে এমন দাবি জানান ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্স এন্ড পলিসি ইনটিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (রেপিড) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘রিফ্লেকশন অন বাজেট ২০২২-২০২৩’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।

সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই জবাবদিহিতা নেই জানিয়ে রিজওয়ান রাহমান বলেন, এমনকি ব্যবসায়ীদেরও কারো কারো মধ্যে নেই। এটি নিশ্চিত করতে আলাদা একটি কর্তৃপক্ষ হওয়া উচিত। যাতে দুর্নীতি দূর হয়। একই আলোচনায় সাংবাদিক ও দৈনিক প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম ও সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠনের আহ্বান জানান। অবশ্য পরিকল্পনা মন্ত্রী আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক মত দেননি। তবে পরিসংখ্যান সংক্রান্ত সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের সহায়তাকে স্বাগত জানান তিনি।

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের দেওয়া সুবিধার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে এম এ মান্নান বলেন, কোন ফিরিয়ে আনার জন্য টাকা পাচার করেনি। কোন চোর ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা চুরি করেনি। ফলে সরকারের সুযোগ দেওয়ার  ফলে টাকা ফিরে আসার সম্ভাবনা কম বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। আমাদের সর্বনাশ, আর সুইজারল্যান্ড-বাহামার পৌষ মাস মন্তব্যে করে এম এ মান্নান বলেন, সুইস ব্যাংক থেকে টাকা আনা, আমার জীবদ্দশায় আশা করিনা। বরং মাঝে মাঝে যাওয়া আসা হবে, কিছু মিটিং-সিটিং হবে। কিছু খরচ হবে।

আরও বলেন, বাস্তবতার নিরিখে মন্দের ভালো হিসেবে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। টাকা আসলে ভালো, না আসলেও ক্ষতি নেই। যা ছিলো তাই আছে।  অবশ্য এই সুযোগ এবারই শেষ হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করে এম এ মান্নান বলেন, আর যাতে না যায়, সেজন্য শক্ত করে দরজার বন্ধ করতে হবে। আলোচনায় অন্যান্য বক্তারাও পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার সুযোগ দেওয়াকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে রেপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপনে সতর্কতার উপর গুরুত্ব দেন। মূল্যস্ফীতির কারনে ব্যয় বেশি হওয়ায় সঞ্চয় কমে গিয়ে বিনিয়োগ কমতে পারে। এর মধ্যে সরকারের অভ্যন্তরীণ সোর্স থেকে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া খোলা বাজারে বিক্রি বা ওএমএস, ফুড প্রোগ্রাম এর মত সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বর্তমান বছরের তুলনায় কমে যাওয়া (জিডিপির বিবেচনায়) কে অবাক করা বিষয় উল্লেখ করেন তিনি। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে রিজওয়ান রাহমান এবারের বাজেট জনবান্ধবের চেয়ে ব্যবসাবান্ধব বেশি  হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনিও চলমান সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দা বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেন। এসময় তিনি বাজেটে আড়াই শতাংশ ট্যাক্স সুবিধা পেতে ১২ লাখ টাকার উপরে ব্যয় ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনের প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন, এবার কেউ এই সুবিধা নিতে পারবে না। এই শর্ত বাস্তবসম্মত নয়। একই সঙ্গে কর কর্মকর্তা কর্তৃক ৫০ লাখ টাকা জরিমানার প্রস্তাবের সঙ্গেও দ্বিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এর ফলে রাজস্ব আসবে না বরং ট্যাক্স কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বাড়বে, সাথে ব্যবসায়ীরা  ট্যাক্স দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হবেন। রাজস্ব ব্যবস্থার অটোমেশন হলে হয়রানি কমে যাবে বলে জানান তিনি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রেপিডের নির্বাহি পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ আগামী অর্থবছরের জন্য ম্যাক্রো ইকোনমির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায় তুলে ধরেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের মেম্বার সেক্রেটারি ড. মো. কাউসার আহমেদ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকার জানে কী করা দরকার। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা (ফিসক্যাল স্পেস) নেই।

সভাপতির বক্তব্যে ইআরএফের সভাপতি শারমীন রিনভী বলেন, পাচার করা অর্থ আনার সুযোগ যাতে  নির্দিষ্ট  সময় পর্যন্ত হয়, পাশাপাশি সময়ের পর যে সব পাচারকারী সুযোগ নেবে না তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ দেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন