ঢাকা | শুক্রবার
৭ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২২শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শতবর্ষী গাছ রেখেই মহাসড়ক উন্নয়ন

শতবর্ষী গাছ রেখেই মহাসড়ক উন্নয়ন

দেশের অতিগুরুত্বপূর্ন স্থলবন্দর বেনাপোল। এ বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের ঝিকরগাছা-কপোতাক্ষ সেতুর দুই পাশে ছয়টি শতবর্ষী শিশু গাছ রেখে ছয় লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে এ রাস্তা দিয়ে চলাচলে ঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন ঝিকরগাছাবাসী ও পথচারীরা।

মহাসড়কের ঝিকরগাছা কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মাণাধীন সেতুটি নির্দেশনা না মেনে নিচু করা হয়েছে। পরে আন্দোলনের মুখে সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ। তবে, ততক্ষণে সেতুর একাংশের (তিন লেন সমান) কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শেষমেশ তিন মাস কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফের সেতুর দুই পাশে আবার দুটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। কালভার্টের সঙ্গে সেতুর দুই পাশে রাস্তা ৩২০ মিটার লম্বা এবং ৩০ মিটার চওড়া করা হ”েছ। এ রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেছে শতবর্ষী ছয়টি শিশু গাছ। এতে রাস্তার চলাচলে আরো ঝুঁকি বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের কপোতাক্ষ সেতুর পশ্চিম পাশে সম্প্রসারিত রাস্তার দুই পাশ দিয়ে যান চলাচল করেছে। এ রাস্তার মাঝখানে রয়েছে তিনটি শতবর্ষী শিশুগাছ। যা প্রায় অর্ধমৃত। এর মধ্যে বাজার অংশের তিনটি গাছের ডালপালা কেটে কিছুটা সংযত করা হয়েছে। পারবাজারের বাসিন্দারা জানান, রাস্তার মাঝখানে গাছ থাকায় ঝুঁকি আরো বেড়ে গেল। গাছগুলো শতবর্ষী এবং প্রায় মৃত। পারবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, রাস্তা প্রশ্বস্ত করতে গাছের গোড়া খোঁড়া হয়েছে ৬-৭ ফুট। এতে মূল শিকড় কাটা পড়েছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে গাছ উল্টে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কালভার্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ডেনকো লিমিটেডের কাজের ব্যবস্থাপক আবদুল আহাদ জানান, কালভার্টের সঙ্গে সেতুর দুই পাশে রাস্তা ৩২০ মিটার লম্বা এবং ৩০ মিটার চওড়া করা হচ্ছে। এতে রাস্তার মাঝখানে পড়ে গেছে শতবর্ষী ছয়টি শিশু গাছ। সেতুর পশ্চিম পাশের ১টি গাছের ডাল কাটা হয়েছে।

যশোর সড়ক ও জনপদের বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, সেতুর পাশে কালভার্টের সঙ্গে অ্যাপ্রোচ রোড করতে শতবর্ষী গাছগুলো রাস্তার মাঝখানে পড়েছে। তবে গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হলেও উচ্চ আদালতে গাছ না কাটার নির্দেশনা থাকায় তাদের কিছুই করার নেই।

এর আগে ঐতিহ্যবাহী বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ শতবর্ষী মরা গাছ কেটে ফেলার জন্য জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছেন শার্শা-ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল রাহক ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র পাল স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি চিঠি যশোর জেলা পরিষদের প্রশাসককে পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এশিয়ান হাইওয়ে এই মহাসড়ক দিয়ে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পণ্যবাহী ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে। বিগত বছরে আম্পানসহ সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ে বেশ কিছু গাছ উপড়ে পড়ে আছে সড়কের পাশে। আজও অপসারণ হয়নি এসব গাছ। ঝিকরগাছা উপজেলা মোড় ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাজিরালি মোড়, বেনেয়ালি মোড়, গদখালি মোড়, নবীনগর, চারাতলা কলাগাছি ও নাভারন পুরাতন বাজারের মতো মানুষের ভিড় এলাকায় মৃত গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এতে সড়কে যাতায়াতকারী যানবাহনসহ মানুষ আতঙ্কে। গাছ গুলো অপসারণ করা না হলে যেকোনো সময় বিশেষত: বর্ষা মৌসুমে ও ঝড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। চিঠিতে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের মৃত বা ঝুঁকিপূর্ণ গাছ জরুরি ভিত্তিতে আইন ও বিধি মোতাবেক অপসারণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

১৮৩০ দশকে জমিদার কালীবাবুর মা নড়াইল থেকে কলকাতায় যান এই সড়ক পথে। তিনি কলকাতা থেকে ফিরে ছেলেকে বলেছিলেন, রোদের তাপে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। তখন কালীবাবু ছায়াঘেরা সড়কের জন্য কলকাতা পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ করেছিলেন। সড়কে পরে কালীবাবুর সড়ক নামে আখ্যায়িত হয়। সেই থেকে আজ প্রায় ২০০ বছর ধরে কলকাতা পর্যন্ত এই বৃক্ষঘেরা ছায়াপথের সুবিধা নিয়ে আসছেন বাংলার মানুষ। যশোর থেকে বেনাপোল সীমানা পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার শতবর্ষী গাছ ছিল। পরে এক জরিপে ২৩৫০টি গাছ পাওয়া যায়। বর্তমানে ৬২০ গাছ আছে। এরমধ্যে ৭৫টি গাছ মৃত। অর্ধমৃত ও ঝুঁকিপূর্ণ গাছ প্রায় ২০০। এরমধ্যে ৭-৮টি গাছ রাস্তার দুই ধারে পড়ে আছে।

ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুল হক জানান, মহাসড়কের পাশে মৃত গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় মানুষ। গাছগুলো বিধি মোতাবেক অপসারণে জেলা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ উজ-জামান বলেন, ইউএনওদের পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। আইনগত দিক ও জনসাধারণের ঝুঁকির বিষয় বিবেচনায় গাছ কেটে ফেলার কাজ চলছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন