- পানি বাড়লেই আমাগো বুক কাইপাঁ ওঠে
তিস্তায় পানি বাড়লেই আমাগো বুক কাইপা ওটে, পোলা-পান নিয়া ডরাইয়া (ভয়ে) থাকি। ওহন বর্ষাকাল কহন যানি নদীর বান বেবাকটি ভাইসা নিয়া যায়।ঝড়-তুফানে কোনে যামু আমরা?
অশ্রুজড়ানো কণ্ঠে কথাগুলো বললেন, ডিমলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী ইউনিয়ন পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাসিন্দা লালবানু বেগম (৫০)। গত ২০ বছর ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করেন তিনি। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এখনো তরতাজা। সামনের দিনগুলো তার কাছে অন্ধকারাচ্ছন্ন, কোথায় থাকবেন, এই ভাবনা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না তিনি।
শুধু লালবানু নয়, জীবনের ঝূঁকি নিয়ে বাঁধের ওপর বসবাস করছেন এ উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ। তিস্তার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে বেড়িবাঁধে ঘর তুলেছে পরিবাগুলো।
বাঁধের বাসিন্দা তরিকুল জানান,একটা সময় তাদের গোয়াল ভরা গরু, উঠান ভরা ধান আর কত রকমের ফলফলাদির গাছ ছিল, ছিল অনেক জমি। যে জমিতে ফসল ফলিয়ে নিজের চাহিদা মিটিয়েও ফসল বাজারে বিক্রি করতেন তারা। তিস্তা নদীর কড়াল গ্রাসে সব কিছু তছনছ করে দিয়ে যায় তরিকুলসহ অসংখ্য বাসিন্দাদের।প্রায় ১০০ বিঘা জমির মালিক তরিকুলের ভিটে একে একে পাঁচবার নদীতে বিলীন হয়ে আজ তিনি নিঃস্ব ভূমিহীন।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত এলাকার বেড়িবাঁধে ঘর তুলে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। উপজেলার স্পার বাঁধ, বাইশপুকুর, দোহল পাড়া,কিসামতের ঘাট, গ্রোয়েন বাঁধ এলাকায় বেড়িবাঁধের উপরেই তাদের বসবাস।দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝুঁকিতে রয়েছে বেড়িবাধের এসব বাসিন্দা। কেউ কেউ আবার বাঁধের বাইরে নদীর তীর ও চরে বসবাস করছেন। ফলে বর্ষা এলেই ঝড় ও ভাঙ্গনের আতঙ্কে থাকেন তাঁরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি,খালিশা চাপানি, খোগাখড়িবাড়ি, পূর্ব ছাতনাই ও পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ভারত বাংলা বাঁধ পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অংশে আশ্রয় নিয়েছে বহু পরিবার। ভেন্ডাবাড়ি চরের স্পার বাঁধের বাসিন্দা নুরুল আলম (৫২) বলেন, ভাঙনের কবলে পড়ে ৭ বার ঘর হারিয়ে এখন বেড়িবাঁধেই আশ্রয় নিয়েছি। বর্ষার সময় এখানে প্রতিটি দিন কাটাই চরম ঝূঁকি নিয়ে।
এছাড়াও উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবারের বসবাস বাঁধের বাইরে তিস্তা নদীর চরে। কখনও এরা দূর্যোগকালীন সময় বাড়ি ছেড়ে সংলগ্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। কখনও বিপদে পড়ছে। কিন্তু এসব মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
খালিশা চা পানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান বলেন, আমার ইউনিয়নের অন্তত ১ হাজার মানুষ বেড়িবাঁধে বসবাস করেন।চেয়ারম্যান জানালেন, ঝড়-বন্যায় এসব পরিবারে প্রাণহানির ঝুঁকি থাকছেই। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে মানুষগুলো বসবাস করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা জানান, উপজেলার ৪০ কিলোমিটার বাঁধে বসবাস করছেন বাস্তুহারা লোকজন। তাঁরা বাঁধে বসবাস করায় বাঁধেরও ক্ষতি হচ্ছে। তাদের স্থানান্তর করে বাঁধটি মেরামতের পরিকল্পনা রয়েছে।




