ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুমানীর ভাঙনে বিলীন বসতবাড়ি-ফসলি জমি

গুমানীর ভাঙনে বিলীন বসতবাড়ি-ফসলি জমি

পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল, ছাইকোলা, নিমাইচড়া ও বিলচলন ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গুমানী নদীর নিরব ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শত শত মানুষের বসতভিটা। তাছাড়া কবরস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঈদগাহ মাঠসহ অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানও বিলীন হচ্ছে গুমানী নদীর গর্ভে।

বছরের পর বছর ভাঙন অব্যাহত থাকায় বসতভিটা হারাতে হারাতে অনেকেই অন্যত্র গিয়ে নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করতে বাধ্য হচ্ছেন। অভাবী মানুষেরা ভিটেমাটি হারিয়ে পড়েন চরম দুর্ভোগে। ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে খুব ধীর গতিতে বছরে ৫ থেকে ৭ ফুট করে ভাঙতে ভাঙতে একসময় জমি অথবা বসতবাড়ির সবটুকু চলে যায় নদীগর্ভে।

বর্ষাকালে ধীর গতিতে ভাঙন হওয়ায় তা চোখে পরে না কারো। এ এলাকার নদী ভাঙন রোধে ছাইকোলা পয়েন্টে আনুমানিক ৫০০ মিটার নদীর পাড় ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করলেও ভাঙন কবলিত বাকি প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে কখনো কাউকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল হামিদ রচিত ‘চলনবিলের ইতিকথা’ গ্রন্থ সূত্রে জানা যায়, জলপাইগুড়ির পাহাড় থেকে উৎপন্ন হওয়া আত্রাই ও গুর নদী রাজশাহীতে এসে কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে পরে। এর একটি শাখা কয়রাবাড়ী, নন্দনালী ও আত্রাই হয়ে আত্রাই ঘাটের এক মাইল নিম্ন হতে “গুড়” নামে সিংড়া, একান্ন বিঘা,  যোগেন্দ্র নগর ও কালাকান্দরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চাঁচকৈড় ত্রীমোহনায় নন্দ কুজার সাথে মিশেছে। এদের মিলিত স্রোত গুমানী নামে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে পাবনার চাটমোহরের মথুরাপুর এলাকায় এসে বড়াল নদীর সাথে মিশে ভাটিতে গিয়ে যমুনায় পড়েছে।

বিলচলন ইউনিয়নের নটাবাড়িয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোকতার হোসেন জানান, নটাবাড়িয়া গ্রামের নদীসংলগ্ন প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরব ভাঙন চলে আসছে। গত ২০ থেকে ২৫ বছরে নটাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অনেক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কিছু আবাদী জমিও গ্রাস করেছে এই গুমানী নদী।

করকোলা গ্রামের সাগর মাহমুদ জানান, বওশা ব্রীজ থেকে ভাটির দিকে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভাঙন কবলিত। রাস্তা ভেঙে বিলীন হচ্ছে গুমানী নদীগর্ভে। ইতোমধ্যে করকোলা কবরস্থান এবং ঈদগাহ মাঠও নদীতে বিলীন হয়েছে। গ্রামের মানুষ চাঁদা, হারি তুলে জায়গা কিনে নতুন কবরস্থান তৈরি করেছেন।

চরসেন গ্রামের রাকিব হোসেন জানান, এ গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভাঙন কবলিত। গত ২০ বছরে ভাঙন কবলিত অংশের প্রায় ৫০ পরিবার অন্যত্র বাড়ি-ঘর নির্মাণ করেছেন। বেশ কিছু আবাদী জমি ও গ্রাস করেছে গুমানী নদী।

বিন্যাবাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, বিন্যাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বাড়ি-ঘর গুমানী নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে। ধানকুনিয়া হাট, ধানকুনিয়া কবরস্থানসহ অনেক মানুষের বসতভিটা কালক্রমে গুমানী নদীতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

বরদানগর গ্রামের রতন হোসেন জানান, বরদানগর বাজার ও ঈদমাঠ ক্রমশ নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ গ্রামের প্রায় শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া গৌড়নগর, লাঙ্গলমোড়া, চরনবীন, কুকরাগাড়ীসহ নদীপাড়ের বেশকিছু গ্রামের মানুষের বসতভিটা ও আবাদী জমি নদীতে ভেঙে গেছে।

চাটমোহর ছাইকোলা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হাসিনুর রহমান জানান, ছাইকোলা পয়েন্টে কিছু এলাকায় ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করা হলেও অন্য কোথাও সংরক্ষণে পদক্ষেপ না নেয়ায় দীর্ঘদিনে চাটমোহরের গুমানী পাড়ের শত সহস্র মানুষের বসতবাড়ি চলে গেছে নদী গর্ভে।

চাটমোহর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রভাষক ফিরোজা পারভীন জানান, চাটমোহর অংশে গুমানীর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ কিলোমিটার। এই ১২ কিলোমিটারের মধ্যে কোথাও এপার আবার কোথাও অন্য পাড় ভাঙছে। কোনো কোনো অংশে নদী পাড়ে চর জাগছে। রাস্তা, বাড়ি, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জায়গা নদীতে বিলীন হওয়ায় এ এলাকার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে ভাঙন রোধ করা যেতে পারে।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সৈকত ইসলাম জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো এবং প্রয়োজনে এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহিত করবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন