মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নীতিমালা উপেক্ষার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আব্দুল মজিদ নামের ওই শিক্ষক নিজের পছন্দের লোক নিয়ে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চেষ্টা করছেন।
জানা গেছে, গত ৯ জুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ফরম বিক্রির শেষ দিন ১২ জুন পর্যন্ত এবং ৩০ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণা করা হয় বৃহস্পতিবার বিকালে। পরের দুইদিন সরকারি ছুটি শুক্র ও শনিবার। তড়িগরি করে পছন্দের লোকদের কমিটিতে আনতে স্থানীয় প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নির্দেশে ওই শিক্ষক এমনটি করেছেন বলে অভিভাবকরা দাবি করছেন।
এ ঘটনায় অভিভাবকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে মৌখিক অভিযোগও করেছেন বলে জানান। অভিযোগে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ তার ফায়দা ও অসাধু কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে নির্বাচনী বিধিমালা উপেক্ষা করে তড়িগরি করে নির্বাচনে আয়োজন করে চলেছেন। কবে কখন নির্বাচন বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও সমাজের গণ্যমান্য অধিকাংশই জানেন না। এমনকি স্থায়ী দাতাগণও এ বিষয়ে জানেন না।
নিয়ম হচ্ছে, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে বর্তমান কমিটি থাকাবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৬০ দিনের মধ্যে একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রনয়ণ করে সকল শ্রেণিকক্ষে টানানোসহ বিদ্যালয় নোটিশবোর্ডে প্রদর্শন করবেন। এটি নোটিশবোর্ডে ৭ দিন টানানো থাকবে। এতে ভুল কিংবা অসঙ্গতি থাকলে সংশোধনের পর পুনরায় নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। এরপর নির্বাচনের লক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগের আবেদন করতে হবে। নির্বাহী কর্মকর্তা যাচাই বাছাই করে একজন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন। তিনি তফসিল ঘোষণা করবেন। এরপর মনোনয়ন পত্র দাখিল বিক্রি কার্যক্রম শুরু হবে। সেটি যাচাই বাছাই করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অথচ বিদ্যালয়টিতে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে এসব নীতিমালা আমলে না নিয়ে বেশ তড়িগরি করছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ। ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনী কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজ ইচ্ছামত সকল কর্মকাণ্ড অবৈধ পন্থায় বাস্তবায়ন করে চলছেন।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা। এদিকে নির্বাচন নিয়ে দুটি পক্ষ সৃষ্টি হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিধি না মেনে নির্বাচনী আয়োজনে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজের ফায়দা লুটতেই এমনটি করে চলেছেন।
আমির হোসেন নামের একজন অভিভাবক বলেন, আমি বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। গোপনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তফসিল ঘোষণা করে পকেট কমিটি গঠনের পায়তারা চালাচ্ছেন।
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী জানান, নির্বাচনী তারিখ এবং সময় জানি না। প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। তাই আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিনা। আমরা নির্বাচনী তফসিল পুনরায় ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা জানি না কবে কখন নির্বাচন হবে। শুনতে পেয়েছি অনৈতিকভাবে রাতের আঁধারে পকেট কমিটির পায়তারা করছে। নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বলেন, যথাযথ নিয়মে নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে আগামীকাল থেকে মনোনয়ন ফরম সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিবো।
একাডেমিক সুপারভাইজার ও প্রিজাইডিং অফিসার মো. সেলিম বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সার্বিক ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে জানতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনকে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।