ঢাকা | বুধবার
৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুরুদাসপুরে বখাটেদের উৎপাত

গুরুদাসপুরে বখাটেদের উৎপাত
  • আতংকে শিক্ষার্থী-অবিভাবকরা

নাটোরের গুরুদাসপুরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানের আশপাশে বখাটেদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের স্বাভাবিক যাতায়াতে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি  হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকারী মহিলারাও। প্রকাশ্য দিবালোকে এসব উৎপাত চললেও প্রশাসনের নেই কোনো তৎপরতা।

উপজেলার পৌর শহরের বেগম রোকেয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজ, শাহিদা কাশেম পৌর বালিকা বিদ্যালয়, বিলচলন শহীদ সামসুজ্জো সরকারি কলেজ, নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, গুরুদাসপুর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে ইদানিং বখাটেদের উৎপাত চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে দলবদ্ধভাবে অবস্থান নিচ্ছে তারা। পথে-ঘাটে ছাত্রীদের উত্ত্যক্তসহ আপত্তিকর মন্তব্য করছে বখাটেরা। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নেশার টাকার চাহিদা মিটাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। অথচ প্রশাসনের নজরদারি নেই সেদিকে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা যায়, গুরুদাসপুর পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোর প্রধান ফটকের সামনে বা আশপাশে বখাটেদের দৌরাত্ম্য মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে ছাত্রীদের চলাচলের পথে সমস্যা সৃষ্টি করছে বখাটেরা। নিরাপত্তার কথাভেবে ছাত্রী ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণ এসব বিষয়ে  লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। এতে করে বখাটেদের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন ভুক্তভোগীরা। এতে শিক্ষার্থীরা লজ্জায় এর প্রতিবাদ করতে পারছে না। কোনো সচেতন ও প্রতিবাদী মানুষ বখাটেদের বাধা দিলে উল্টো প্রতিবাদকারীদেরই রোষাণলে পড়তে হচ্ছে।

দেখা যায় বিভিন্ন নির্জন স্থানে, পুকুর পাড়ে, বাগানের  পাশে, স্কুলের সামনে দোকানপাট, বাসস্টেশনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সামনে বসে বখাটেরা প্রকাশ্যেই মাদকসেবন করছে। আর আড্ডা মারছে। এমনকি স্কুল-কলেজ ছাত্রীদের পিছু নিয়ে তাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে  যাচ্ছে। যার কারণে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের চলাফেরা এবং লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। এমনকি অনেক অবিভাবকই ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে বাল্য বিয়ের হারও।

সীমা, মীম ও বনফুল নামের কয়েক জন স্থানীয় শিক্ষার্থী জানায়, বাসা থেকে বেড় হয়ে রাস্তায় চলাচল, কেনাকাটার সময় পাশে কেউ না থাকলে হাত ধরে টানা টানি করে হেনস্থা করা, তাদের ছবি ও ভিডিও তোলা, প্রতিবাদ করতে  গেলে ছাত্রীদের মোবাইল কেড়ে নেওয়া, হুমকি দিয়ে  টাকা পয়সা দাবী করা,  জোর করে প্রেম ও কুপ্রস্তাব দেওয়া বখাটেদের নিত্য দিনের কাজ। এমন কি বাবা ভাইয়ের সাথে ঘুরতে গেলেও হেনস্থায় শিকার হতে হচ্ছে আমাদের প্রতিনিয়ত। আমরা বাঁচতে চাই, লেখা পড়া করে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।

গুরুদাসপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম মিঠু বলেন, বখাটেরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় দাপটের সঙ্গে রাস্তায় হৈ-হুল্লোড় করে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রী ও পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। যার কারণে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। এ ব্যাপারে আমার স্কুলেই অনেকবার ঝমেলা হয়েছে। যার সমাধান করতে কারো সহযোগিতা পাইনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অবিভাবক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, আমার কোনো পুত্র সন্তান নেই। তিন মেয়ে তিন জনকেই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছি বখাটেদের অত্যাচারে। বাল্যবিয়ের কুফল জেনেও বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। যার প্রভাব আমি নিজ চোখে দেখে গেলাম। এ রকম দুর্ভাগ্য যেন কারো না হয়।

বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা রুমা বলেন, নেশাগ্রস্ত বখাটেদের অত্যাচার প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। অতিদ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেবার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি। অন্যথায় যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সামনে পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে করে ছাত্রীরা নির্ভয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করতে পারে। অপরাধী সেই হোক তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। এব্যপারে পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন