সামাজিক সুরক্ষার আওতা বৃদ্ধি
সামাজিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে জোর দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। এখাতে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
গতকাল বাজেট অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী জানান, প্রতিবছর সামাজিক সুরক্ষার কভারেজ ও বাজেট বরাদ্দ উভয় বৃদ্ধি করে যাচ্ছি। এরই মধ্যে ২৯ শতাংশ পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং বাজেট বরাদ্দ ২০০৮-৯ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৮ গুণ বেড়েছে। দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য দুর্যোগ প্রবণ এলাকা, দরিদ্রতম এলাকা এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাতের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, শহর এলাকায় ‘শহর সমাজসেবা কার্যক্রম’ এবং ‘এসিড দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম’ নামে মোট ৪টি সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ কার্যক্রমে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ঋণ প্রদান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
দুস্থ-প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের জন্য নেওয়া কার্যক্রম প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, দুস্থ প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতার ক্ষেত্রে প্রবীণ নারীকে দেওয়া হচ্ছে অগ্রাধিকার। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ৫৭ দশমিক ১ লাখ ভাতাভোগীর জন্য বয়স্ক ভাতা খাতে ৩ হাজার ৪৪৪ দশমিক ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা চলমান থাকবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
এসব উপকারভোগীর সংখ্যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫৭ লাখ বাড়িয়ে ২০ দশমিক ৮ লাখের স্থলে ২৩ দশমিক ৬৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসময় মাসিক ভাতার হার ৭৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করা হবে। এছাড়া নতুন অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ ২ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।
আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, সরকার প্রবাসী ও প্রবাস থেকে প্রত্যাগত কর্মীদের রিইন্টিগ্রেশন ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে ‘বিনিয়োগ ঋণ’, প্রবাসী কর্মীর মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, অক্ষম প্রবাসী কর্মীদের দেশে ফেরার পর চিকিৎসা সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামীতে অভিবাসনে পিছিয়ে পড়া দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সমগ্র দেশ থেকে অধিকহারে অভিবাসনে উৎসাহী করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে উপজেলা পর্যায়ে ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণকাজ আরম্ভ করা হবে। এছাড়া, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৮ লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং ৫ লাখ ২০ হাজার জনকে বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা দিচ্ছি যে সরকার আগামী অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক